Skip to main content

 

উপনিষদ বলে, যে বলে জেনেছি, সে জানেনি। যে বলে জানি না, সেও জানেনি।

বৃন্দাবনে রাধারমণ মন্দিরের বাইরে বসে আছে দীনু ভিখারি। বাড়ি ছিল এই বঙ্গের কালনায়। সবজী বিক্রি করত। ধীরে ধীরে সব শূন্য লাগল। অর্থহীন লাগল। সব ঘটছে কিন্তু সব যেন বেখাপ্পা। তার কী কাজ?

বৃষ্টি হচ্ছে লাগাতার। পরিক্রমামার্গ জলের তলায়। কোথাও যাওয়ার নেই। তবে জানার কী আছে? জানা নেই। জানা যায় না। এ মন্দির গর্ভে যিনি, তাঁকে কতটা দূর জানে?

পা জলে ডুবে। যমুনার জল। একজন জিজ্ঞাসা করল, মন্দির খোলা?

চমক ভাঙল দীনুর। মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, হ্যাঁ খোলা।

যে জানতে চাইল সে অল্প বয়েসী মেয়ে একজন। দীনুর বুকের ভেতর অবধি তার মাধুর্য গড়িয়ে এলো। এ তো আজ বলে নয়। আগেও হয়েছে। আগে মনে হত পাপ। অন্ধকারে ফোটা নিষিদ্ধ ফুলের সৌরভ। এখন মনে হয় না। এখন শান্ত হয়ে দেখে মনের অলিগলি। আগে অনেক গলি ছিল। এখন গলি কম চাতাল বেশি। চাতালে আলপনা আঁকা। সব আলপনার কেন্দ্রে একটা নীল দাগ। সে নীল দাগের মানে খোঁজে দীনু ভিখারি। এক একবার মনে হয় নীলকণ্ঠের নীল বিষ। কখনও মনে হয় ময়ূরকণ্ঠী নীলের বিন্দু, নীলনবঘন শ্যামের মাধুরী। কী ও?

মেয়েটা চলে গেল মন্দিরের ভেতর। মন মেয়েটার সঙ্গে গিয়ে গিয়ে রাধারমণের সামনে এসে দাঁড়ালো। রাধারমণ দীনুর দিকে তাকিয়ে হাসছে। তার মনের গতিক দেখে হাসছে। মজা পাচ্ছে। পাও পাও। তোমারই খেলার ঘুঁটি, যেমন চালাও তেমন চলে।

মেয়েটার পায়ে নুপুরের আওয়াজ। কানে আসছে। প্রাণে আসছে। রাধারমণ নেমে আসছে। সারা মন্দিরচত্ত্বর ফাগে ভরে গেল। কোথায় যেন মৃদঙ্গ বাজছে। মেয়েটা কই? রাধারমণ কই? সারা মন্দির ফাগের রঙে রঙিন। ফাগের মেঘে ঢাকা। সে নাচছে। তার কপাল গড়িয়ে নামছে নীল রঙ। এ নীল রঙ কী রাধামাধব - বিষ, না মাধুরী? তোমার নাচে আজ কীসের ছন্দ প্রভু - নটরাজের, না মথুরারাজের? কী নৃত্য প্রভু?

দীনু….দীনু….

দীন চোখ খুলল। বুড়ো গোঁসাই দাঁড়িয়ে। হাঁটু অবধি জলে ডুবে। ছোটোখাটো মানুষটা তার দিকে তাকিয়ে। হাসি মুখ। বলল, নাচাচ্ছে বুঝি? এই নে….গোপেশ্বর মন্দিরে গিয়েছিলাম…..নীলকন্ঠ পাঠালেন….নাও…..

বুড়ো গোঁসাইয়ের হাতে একটা ধুতরো ফুল, তার তিনটে পাপড়িতে নীল ফাগ লেগে।

দীনু নিল। যমুনা দুই চোখে নামল। দুটো হাত কপালে ঠেকিয়ে বলল, যাও যাও…মন্দিরে….যাও….সে এখনও চড়েনি সিংহাসনে….কিন্তু আমি আজও তাকে চিনলাম না জানো…আমারই সামনে এসে দাঁড়ালো…. আমাকেই জিগালো…..আমি তখন বিচারে…..

বুড়ো গোঁসাই মন্দিরের দরজা দিয়ে ঢুকতে ঢুকতে বলল, তাকে জানোনি বলেই জেনেছ দীনু……জানতে গেলে জানা যেত কি?.....

দীনু বুড়ো গোঁসাইকে হাতজোড় করে প্রণাম জানালো। এ ঘটনা তো নতুন কিছু নয় বৃন্দাবনে!!