Skip to main content

এক রকমের মিথ্যা সত্যের প্রশ্রয়ে হয়। এই যেমন আমার এক বন্ধু বাসে উঠলেই বমি করে। এখন এমন একটা পরিস্থিতি তো কারোর পক্ষেই সুবিধার নয়, না তো যে করে তার জন্য, না তো যার উপর করে তার জন্যে। তখন তাকে কি বলতে হয়? দু ঘন্টার রাস্তাকে বলতে হয়, এই এলো বলে।

তারপর যেমন যার ইঞ্জেকশনে ভয়, তাকে বলতে হয়, এই কি এমন আর লাগবে!

এই সব মিথ্যা ভালো মিথ্যা। মানে এগুলো হল গিয়ে সত্যের প্রশ্রয়ে মিথ্যা। কিছু কিছু মানুষ অবিশ্যি আছে যারা সব সময় একটা যুধিষ্ঠিরের আল্ট্রা ভারসানে থাকতে চায়। যতই বলো, বাবা, এমন কথাটা বলিস না, ওর প্রাণে ব্যথা লাগবে। এ ক্ষেত্রে মিথ্যা বললে কারুর কিচ্ছু যাবে আসবে না। কিন্তু কে শোনে কার কথা। সে বলবেই বলবে।

এই যেমন আমার এক বন্ধুর গোঁফ ছোটোবড় নিয়ে মেলা বাতিক আছে। এখন রাস্তাঘাটে হঠাৎ করে যদি বলা হয়, এই যে তোমার ডানদিকের গোঁফ তো হেলে পড়েছে, আর বাঁদিকের গোঁফ তো প্রায় মধ্যিখানে এসে পড়েছে। তখন? তখন সে বেচারা কি করে? তখন সে কি কাঁচি কিনে, আয়না কিনে রাস্তার মাঝখানে বসবে গোঁফ ছাঁটবে? কিন্তু যে বলার বলবেই। আর সে বেচারা রাস্তার হাঁটতে হাঁটতে বাইকের আয়নায়, দোকানের কাঁচে, বাড়ির জানলার কাঁচে, মায় জলের গ্লাসের কাছে মুখ এনে জলের প্রতিবিম্বে মাপতে শুরু করবে কতটা কম বেশি হল।

কথা হচ্ছে মানুষের আত্মজ্ঞান হওয়াটা একটা ইনস্টলমেন্টের প্রসেস। ধুম করে হয়ে যায় নাকি!

এই যেমন কদিন আগে আমার বই উদ্বোধন ছিল। তা আমি কলেজস্ট্রিট ঘুরে, কফিহাউস ঘুরে, প্যারামাউন্ট ঘুরে শ্যামবাজারে পৌঁছালাম। কেউ চিনল আমায়? কেউ না। ওরে বাবা তোদের সামনে দিয়ে এমন একজন কালজয়ী রচনাকারী হেঁটে বেড়াচ্ছে, সরবৎ খাচ্ছে গ্লাসে পাইপ ডুবিয়ে, বই বাছছে প্রগ্রেসিভ গ্লাসের নীচে দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখে দেখে, তোরা কেউ বুঝছিস না!

কেউ তো বুঝলই না, উপরন্তু উবেরের ড্রাইভার ভাবলে কিনা আমি নাকি ঠাকুর দেখতে এসেছি! হা ঈশ্বর! আমি! যার নাকি কয়েক মিনিটে বই বেরোবে সে নাকি লাইনে দাঁড়িয়ে, নাকি লাইন দিয়ে, নাকি…. উফ!

যা হোক। শ্যামবাজার আসার আগে ভাবলাম আর না হোক ক্যাফের সামনে না হয় হাজার পঁচিশেক মানুষের লাইন তো হবেই। কিছু লোক হয় তো বা সুভাষের কোলে চড়ে আমার সগৌরব উবের পতন ও ক্যাফে হন্টন দেখে জন্ম সার্থক করবে! পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ হয়ে থাকবে চারদিক। হয় তো সময় গড়ালে র‍্যাফও নামানো হতে পারে!

কিস্যু হল না!

তো আমি কি তাই বলে দমে গেলাম! আদৌ না! বেশ দিব্যি মেট্রো চড়ে, ট্রেনে চড়ে বাড়ি এলাম। আমার বাড়ির সামনে আসতেই কি সুন্দর আমার পাড়ার সারমেয়ের দল ওই অন্ধকারেও আমার শ্যমকান্তি চিনে লেজ দুলাতে দুলাতে আমার সঙ্গ নিল।

মনটা কি প্রসন্নতায় ভরে গেল। এই যে আমাকে যে চেনে আর আমাকে যে চেনে না, এর মধ্যে এই যে এক ধোঁয়াশায় মিশে আমি তুমি…. এই তো হল গিয়ে সত্যের প্রশ্রয়! আমার ঘরে অন্ধকার নামল। আমার চোখে ঘুম। আমার চেতনা গিয়ে ঠেকল সেই নীরব সভার আনন্দময় লোকে। যেখানে তিনি পরমানন্দ। পরম সুখ। পরম তৃপ্তি। আলো আঁধারির ছায়াপথে।