পটলার যখন বিয়ে হচ্ছিল, তখন পাড়ার সবাই বলেছিল, এমন মা না হলে ছেলেটা যে কোথায় ভেসে যেত। এমনকি পটলার যখন ডিভোর্স হচ্ছিল তখনও পাড়ার সবাই বলেছিল, এমন মা না হলে ছেলেটা জেল খেটে খেটেই মরে যেত।
পটলা প্রেম করতে শুরু করে ক্লাস টু থেকেই। পটলার মা সব জানলেও নিজেকে জড়াতো না। পটলা যখন প্রথম ইলেভেনে ফিনাইল খেলো, তখন থেকে পটলার মা সব প্রেমে নিজেকে জড়িয়ে রাখত। ভাগ্যে সেদিন ফিনাইলে জল মেশানো ছিল, নইলে কি যে হত! প্রায় মাস তিনেক পটলার ঢেকুরে ফিনাইলের গন্ধ বেরুতো।
পটলা রাতে প্রেমিকার সঙ্গে কথা বলত। মা সিঁড়িতে বসে থাকত। পটলা যখন কেঁদে উঠত কথা বলতে বলতে, মা তখন সিঁড়িতে আরো দু'ধাপ এগিয়ে বসত। দু'বার লাফ দিয়ে পটলা হাত আর পা ভেঙেছে। এক-একবার ব্রেক আপ হয়, পটলা খাওয়াদাওয়া ছেড়ে দেয়। আবার নতুন মেয়ে আসে। পটলা আবার স্বাভাবিক হয়।
আজকাল নতুন কোনো মেয়ে এলেই পটলার মা তার সঙ্গে পরিচয় করে নেয়। হাল্কা ঝগড়াঝাটি হলে পটলার মা নিজে থেকেই ক্ষমা চেয়ে নেয়। একটু অভিনয় করে কান্নাকাটি করে। এই ক্ষেত্রে কাজে দেয় সিরিয়ালগুলো। এক-একবার এক-এক অভিনেত্রীকে নকল করে কাঁদে। লোকে বলে ওনার কাঁদার মধ্যে জুন মালিয়ার একটা ছাপ আছে বেশি।
ছেলে যখন ঘুমায়, মা ফোন হাতে করে বসে থাকে। ছেলের কড়া নির্দেশ আছে, মেয়েটা মেসেজ বা ফোন করলেই যেন ওর মা তৎক্ষণাৎ উত্তর দেয়, বাবু ঘুমাচ্ছে, আমি এক্ষুণি ডেকে দিচ্ছি মা। একবার তো পটলার মায়ের তুমুল পেট খারাপ। তাও বাবু ঘুমাচ্ছে, উনি ফোন নিয়ে পায়খানায় ঢুকেছেন। এখন শৌচাদির সময় তো ভিজে হাতে ফোন ধরা যায় না… তাই দেরি হয়েছে বলে, মাকে দিয়ে ছেলে চারবার ক্ষমা চাইয়েছে সে মেয়ের কাছে।
পটলার বাবার বিরাট ব্যবসা। না হলে ঝগড়ার সময় যতগুলো আইফোন ভেঙেছে পটলা ততগুলো ফোন অ্যাপেলের মালিক জোবস্ ব্যবহার করেছে কিনা সন্দেহ। পটলার বাবার এসব একদম সহ্য হয় না, কিন্তু বউ দিব্যি দিয়ে রেখেছে পটলার কিছু হলে উনি তৎক্ষণাৎ গায়ে আগুন দেবেন। আসলে পটলার বাবার আগুনে খুব ভয়, তাই একে অপঘাত, দুই আগুন, পটলার বাবা আর রা কাড়েন না। জটিলানন্দের কাছে দীক্ষা নিয়েছেন। পটলার মা পটলাকে নিয়ে থাকে, পটলার বাবা গুরু নিয়ে। দু'জনেই দু'জনের বায়নায় ক্ষণকাল অবসর পায় না। তাই সুখে থাকে।
দেখতে দেখতে পটলার বিয়ে ঠিক হয়ে গেল। মাত্র চার মাসের প্রেমের মাথাতেই বিয়ে। মেয়ের বাড়ির তাড়াতাড়ি আছে। কারণ মেয়ের বাবার ওপেন হার্ট সার্জারি সামনেই। তার আগেই ওনারা চাইছেন। তাই হল।
পটলা আগে এমনিতেই বেলা করে উঠত। এখন আরো বেলা করে ওঠে। পটলার মা পাড়াপ্রতিবেশীকে বলে, কি এমন বয়েস বলো, তার মধ্যে সারারাত এত পরিশ্রম, তাই উঠতে পারে না গো।
পটলা ঘুম থেকে উঠলেই মা হেলথ ড্রিংক্স দেয়। ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে ডায়েটচার্ট বানিয়ে এনেছে, বলবর্ধক, বীর্যবর্ধক। কিন্তু হলে কি হবে বলে-বীর্যে কিছুতেই বউমাকে এক মাসের বেশি রাখা গেলো না। ডিভোর্স হয়ে গেল।
পটলা এখন আবার প্রেম করে। মা এখনও সিঁড়িতে বসে থাকে। বিশেষ দিনে গুরুদেবের নির্দেশ অনুযায়ী বাড়িতে প্রেম-ধারক যজ্ঞ হয়। কিন্তু সমস্যা হল চারটে ডিভোর্সের পর পটলা আর বিয়ে করতে চায় না। এখন শুধু নেশা আর ভালোবাসার মধ্যে বেঁচে থাকে। কিন্তু এ ভালোবাসাগুলো অন্যরকমের। মোবাইলে হোটেল রুম বুক করে। পটলা হোটেলে যায়। মা বাইরে সারারাত গাড়িতে অপেক্ষা করে। ঘুমায়।
একদিন পটলা আর তার মা বাড়ি ফিরছে। পটলা মায়ের কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে। পটলার মা ওর বাবাকে কেঁদে কেঁদে বলে, এইসব হোটেলে আসা মেয়েদের সঙ্গে রাত কাটাতে তো আরো শ্রম লাগে গো, কিন্তু খাওয়াদাওয়া বলতে গাঁজা-মদ আরো যা সব আছে ওতে তো শরীর ক্ষয়ে যাচ্ছে!
পটলার বাবা ঠাকুরের নাম করে। শুধু 'হুঁ' বলে।
পটলা মায়ের কাঁধে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে। পটলার মা বলে, বাবা, এসব কবে শেষ হবে রে… তুই কি আর আগের মত হবি না রে…
পটলা জিভ জড়িয়ে উত্তর দিল… তুমি কেন আমায় শাসন করে আটকে রাখলে না মা… এখন তো আমিই আমাকে আর সহ্য করতে পারি না…
পটলার মা জানলার দিকে তাকিয়ে চুপ করে বসে। একদিন পটলা আর সে অনেক দূর চলে যাবে। সেখানে কেউ কোনোদিন পটলাকে কেড়ে নিতে আসবে না। সেদিন কষে একটা চড় মারবে। পটলা কাঁদবে। কিন্তু কোথাও যাওয়ার জায়গা থাকবে না বলে আবার ফিরে আসবে। সবটা দিয়ে শুধু তাকেই ভালোবাসবে।
(ছবি - Suman Das)