"প্রেমচন্দ ঘর মে", শিবরানীজীর লেখা। লেখিকা প্রেমচাঁদজীর স্ত্রী। যে ক'টা হিন্দি ভাষায় লেখা বই পড়ে বিস্মিত হয়েছি, তার মধ্যে এই বইটা আমার কাছে অন্যতম। "ম্যায় বোলি" আর "আপ বোলে" এর মধ্যে যে অদ্ভুত সব কথোপকথন, পড়তে পড়তে মনে হয় সেদিন কতটা সাহস থাকলে, আত্মবিশ্বাস থাকলে এমনভাবে নিজেকে প্রকাশ করতে পেরেছিলেন ওনারা। ১৯০৬ সালে শিবরানীজীকে বিয়ে করেন প্রেমচাঁদ, শিবরানীজী ছিলেন বিধবা তখন। তখনকার দিনে বিধবা বিবাহ নিশ্চয়ই অতটা সহজ ছিল না। শিবরানীজী নিজেও লিখছেন সে কথা।
মর্মান্তিক বর্ণনা আছে প্রেমচাঁদের মৃত্যুর। এই বইতে না। অন্যান্য বিখ্যাত লেখকদের স্মৃতিচারণে। শিবরানী প্রেমচাঁদের নিথর দেহটা কোলে করে বসে আছেন। উন্মাদের মত কাঁদছেন। বিলাপ করছেন। এদিকে বাইরে সাহিত্যিক, আরো সব মান্যগণ্য লোকেদের ভিড় জমা হয়েছে। সবারই তাড়া আছে, শ্মশানের কাজটা মিটিয়েই যে যার কর্তব্যকর্মে ফিরে যেতে চান তাড়াতাড়ি। কেউ পুরোটা যাবেন। সবটা সময় থাকবেন। অনেকেই মাঝপথে ফিরে যাবেন, অর্ধেক দাহ হতে না হতেই ফিরে যাবেন। সবারই তাড়া। এদিকে শিবরানীজী প্রেমচাঁদের নশ্বর দেহ ছাড়তে রাজী নন। কিছুতেই ছাড়বেন না।
তখন একজন কবিকে সবাই বলল, আপনি অন্তত ওঁকে রাজী করান, এতটা অবুঝ হলে চলে?
অবশ্যই চলে না। যিনি এক সময় স্বাধীনতা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছেন, কারাবাস করেছেন, প্রেমচাঁদের হাতে তৈরি যিনি এত "প্রগ্রেসিভ" তিনি কেন এমন করবেন? এ কী শোভা পায় তাঁকে?
সেই কবি বোঝাতে গেলেন। তখন তাঁর কথা শুনে শিবরানীজী যা বলেছিলেন সেই কবি আজীবন সেই কথায় পোড়া দগদগে হৃদয় বহন করেছেন স্মৃতিতে। শিবরানীজী বলেছিলেন আর্তনাদের সুরে....
"आप कवि हो सकते है पर स्त्री का हृदय नहीं जान सकते। मैंने इनके लिये अपना वैधब्य खंडित किया था। इनसे इसलिये नही शादी की थी कि मुझे दुबारा विधवा बना कर चले जाये। आप हट जाइये"।
(আপনি কবি হতে পারেন, কিন্তু নারী হৃদয়কে বোঝার শক্তি আপনার নেই। আমি এঁর জন্য আমার বৈধব্যকে খণ্ডন করেছিলাম। এঁকে আমি আবার এই জন্য বিয়ে করিনি কী ইনি আমাকে আবার বিধবা করে চলে যাবেন। আপনি সরে যান!)
আজ প্রেমচাঁদের মৃত্যুদিন। তিনি মহান সাহিত্যিক। তাঁর স্মৃতিতে অজস্র প্রবন্ধ লেখা হবে। বই লেখা হবে। কিন্তু শিবরানীজী যেন হারিয়ে না যান। পিলসুজকে ভেঙে প্রদীপের আলোর গুণগান আমরা আগেও করেছি। সে অভ্যাসে যেন শিবরানীজী ভেসে না যান। প্রেমচাঁদ শিবরানীজীকে কী শ্রদ্ধা করতেন, কী ভালোবাসতেন, ওঁর মতামতকে কী ভীষণ গুরুত্ব দিয়ে দেখতেন সে এ বইটা পড়লেই বোঝা যায়।
এ বইটা তিনি প্রেমচাঁদকেই সমর্পণ করে লিখছেন, হে স্বামী, তোমারই জিনিস তোমারই চরণে অর্পণ করলাম, এ তুচ্ছ সেবাকে গ্রহণ করো। ইতি তোমার দাসী, অথবা তোমার রাণী। শিবরানী।