Skip to main content


মানুষটা শ্যামাপোকা খুঁজতে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে লাগল। ফোন করলে ধরল না। লোক পাঠালে ধরা দিল না। এ পাড়া, সে পাড়া ঘুরে কোথাও শ্যামাপোকা না পেয়ে লোকটা একটা রাস্তার মোড়ে বসে পড়ল, হাঁটুতে মাথাটা গুঁজে। কেউ কিছু জিজ্ঞাসা করলে সাড়া দিল না।

    তার ছোটোবেলার সব শ্যামাপোকারা ভিড় করে তার সারা শরীর মন ছেয়ে গেল। বাবা, মা, ভাই, বোন সবার গায়ে শ্যামাপোকা। সবাই নতুন জামা পরেছে। না, সবাই তো না, বাবা আর মায়ের নতুন জামা, শাড়ি নেই। তারা তখন গরীব। খুব গরীব না হলেও গরীব। শ্যামাপোকা চোখেমুখে বসলে তখন রাগ। সারাদিন অনেক কারণে রাগ তখন ছিল তার। ভালো খাওয়া, ভালো পরা, ভালো খেলনা। কিচ্ছু ছিল না। শুধু শ্যামাপোকা ছিল। আর বাবা, মা, ভাইবোন, আরো কারা কারা সব, আর বড্ড কাছাকাছি ভালোবাসা। শ্যামাপোকার মত গায়ে হাতে মুখে চোখে বসা ভালোবাসা। ভালোবাসা মানে সেদিন ছিল এমনি এমনি খেয়াল রাখা। বেশি বেশি! বিরক্ত হত সেদিন। 

    আজ সে বড়লোক। বাবা, মা নেই। ভাইবোন কেউ আছে, কেউ নেই। এখন রাস্তা চলার গাড়ি আছে। সাতজন্ম বসে খাওয়ার ভাত আছে। সারা বিশ্ব আকাশে ওড়ার টাকা আছে। মরে গেলেও যমের দুয়ার থেকে ফিরিয়ে আনার দামী হাস্পাতালে কার্ড আছে। কিন্তু শ্যামাপোকা নেই। চোখেমুখে আছড়ে পড়া ভালোবাসা নেই। সবাই আছে। ছক কাটা আছে। সবাই যেন দাঁড়িয়ে আছে। কেউ কারোর ছকে হুড়মুড়িয়ে "কবাডি কবাডি'' বলতে বলতে ঢুকে পড়ার মজার খেলাটা নেই। সবাই দাঁড়িয়ে আব্বুলিশে। শ্যামাপোকারাও দাঁড়িয়ে আছে আব্বুলিশে। 

    দেখতে দেখতে মানুষটার সারা গা ভরে গেল শ্যামাপোকায়। মানুষটা হারিয়ে গেল সবার সামনে। কেউ জানল না। সবাই দাঁড়িয়ে নিজের ছকে। আব্বুলিশে।