অনেক রাত
   কলকাতা ভিজছে শ্রাবণের ধারাপাতে
ভীষণ জেদি মানুষ এক
   হাঁটছেন আপনমনে, দ্রুত পদে পথে। 
আজন্মই অসম্ভব জেদ তার
সূর্যের মত জেদ
   যাই হয়ে যাক না কেন
        প্রতিদিন পূর্ব দিকে সে উঠবেই
সমুদ্রের মত জেদ
  হোক দিগন্ত অগম্য, হোক অধরা আকাশ
    তবু লবণাক্ত হৃদয় বিছিয়ে
       আকাশ বুকে 
             দিগন্ত ছুঁয়ে সে আসবেই
পাহাড়ের মত জেদ
   যাই ঘটে যাক না কেন
     আপন ব্রতে স্থির থেকে
       অনড় অচল গগনচুম্বী সে হবেই 
মানুষটা হাঁটতে হাঁটতে শুনলেন
      পিছনে কে যেন আসছে
এত রাতে, জনহীন পথে
  কে এসেছে তার পিছে ?
ঘুরে তাকালেন
এও এক জেদ তার
  বারবার পিছন ফিরে তাকানো
     কেউ কি পড়ে রইল একা! 
একজন রমণী
সর্বাঙ্গ ভিজে
শ্রাবণের ধারাপাতে
   অন্ধকারে মুখ যায় না দেখা।
জেদি মানুষটা বুঝলেন, বললেন, 
"তুমি ভুল মানুষের কাছে এসেছ মাগো
    ফিরে যাও"
এগিয়ে গেলেন, বলে
হাঁটতে হাঁটতে বুঝলেন
   আবার সে পিছনে আসছে চলে
থামলেন আবার
 ফিরে তাকালেন
   বললেন আবার
     ফিরে যাও মা, 
      ভিজো না রাতে
              এমন বৃষ্টিজলে। 
বাসবদত্তা আবার যেন আনন্দের মুখোমুখি 
   বৃষ্টিস্নাত কলকাতার পথে
          অন্য অভিসারে
          অন্ধকারে আজ
             যেন যুগান্তরের চোখাচোখি
দুই হাত করে জড়ো
  কেঁদে ফেলল সে 
       বলল,
  ওগো শিশু কন্যাটির আমার
       ক'দিন হল ভীষণ জ্বর 
         পয়সা নেই যে
           ডাক্তার আনি ডেকে
           বিনা চিকিৎসায় মরবে কি ও 
              মা হয়ে 
                সেও দেখতে হবে এ পোড়াচোখে!
বিদ্যুৎ চমকে গেল
   আকাশে নয়
    এই ভীষণ জেদি মানুষটার বুকে
হঠাৎ ভীষণ মেঘ জমল
    আকাশে নয়
   সেও এই জেদি মানুষটার চোখে
কাঁদছেন করুণাসাগর
    আহত আনত মুখে 
রমণী গেল ফিরে 
   পূর্ণহাতে
প্রথম মনুষ্যত্বের মান নিয়ে
  পূণ্য ভিক্ষার সাথে
কাঁদছেন করুণাসাগর
  একা একা হাঁটছেন মহানগরীর পথে
    পিছনে চলেছে ইতিহাস
      অনেক অত্যাচার আর অপমানের
অভিযোগ অভিমান নিয়ে সাথে