গতকাল বাংলা নিউজচ্যানেলগুলোর সাংবাদিকেরা বেশ বাড়াবাড়ি করে ফেলেছেন এই নিয়ে বিস্তর লোকজন বিস্তারিত লিখছেন, আপত্তি জানাচ্ছেন, বকাঝকা করছেন ইত্যাদি ইত্যাদি মানলুম। কিন্তু আপনারা আর কিছু দেখলেন না? মানে খেয়ালই করলেন না? মানে আপনাদের সংস্কৃতিপ্রবণ বাঙালি মনে চোখেই পড়ল না? হায় হায়! অগত্যা আমিই বলি।
নানা চ্যানেলে নানা অ্যাঙ্করদের অসাধারণ সংবাদ পরিবেশন শুনতে শুনতে আমার কখনও মনে পড়ছে গিরিশ ঘোষের কথা, কখনও শম্ভু মিত্র, কখনও অজিতেশবাবু, কি উৎপলবাবু, কি মায় রুদ্রপ্রসাদের কথা, কিম্বা বীণাদেবী।
কে বলে আমাদের থিয়েটার, যাত্রা ইত্যাদি শিল্প হারিয়ে যাচ্ছে। ওরে পাগল কিছুই হারায় না। যে কারণে মানুষ আগে গুহায় থাকত সেই কারণেই এখন ফ্ল্যাটে থাকে, উপর-নীচ-ডানে-বামে প্রতিযোগী, থুড়ি, প্রতিবেশী পরিবৃত হয়ে। কিছুই হারায় না রে পাগল। সবই রঙ বদলায়। সেই যাত্রা থিয়েটার মঞ্চই আজ এসেছে ফিরিয়া সংবাদমঞ্চ হয়ে। দেখেন না সঙ্গে আবহসংগীতও থাকে। আহা, কোথায় তিমিরবরণ, কোথায় অনলবাবু, নচিকেতার মত মানুষেরা। ভাবুন দেখি, কাল যখন একজন মহিলা টেবিল দাপিয়ে দাপিয়ে নিউজরুম থেকে বলছেন, "ওই দেখুন একটা কুকুর, হ্যাঁ হ্যাঁ কুকুর, কিভাবে মাথা উঁচিয়ে, একটু আশ্রয়ের জন্য (গলাটা ভেঙে গেল), একটু আশ্রয়ের জন্য মাথা উঁচিয়ে জলে ভেসে ভেসে চলেছে"....আহা ভাবুন তো এই সময়ে যদি তিমিরবরণ মহাশয় থাকতেন, এবং তিনি মল্লারের একটা করুণ মীড় কোমল গান্ধারে এনে ফেলতেন, আহা, চোখে জল চলে আসত কিনা? আপনার আদা দেওয়া চা, রান্নাঘর থেকে ভেসে আসা ঘিস্নাত খিচুড়ির গন্ধ...সঙ্গে টিভির স্ক্রিণে রিয়েল লাইফের লাইভ দুর্যোগ, সঙ্গে অসামান্য নাট্যগুণে ভরা সঞ্চালন। জীবনে আর কি চাই বলুন তো! এই তো জীবন। মানে যাকে বলে রিয়েলেস্টিক জীবন।
সেই বলছিলাম আর কি। সঙ্গীত নাটক আকাদেমি থেকে এনাদের পুরষ্কৃত করা হবে না, না? সে আর কেন হবে? আমাদের দেশে যোগ্য লোকে আর কবে সম্মান পেল? আচ্ছা যাওয়ার আগে একটা প্রশ্ন, বলছি খিচুড়িতে নুন ঝাল সব ঠিক ছিল?