Skip to main content

- আপনি নিজের প্রশংসা এভাবে নিজেই নিজের মুখে করেন কেন? বাজে লাগে না?

- কেন বাজে লাগবে কেন?

- না, মানে ব্যাপারটা একটু শ্রুতিকটু না?

- না। আপনি কোনদিন দেখলেন আমি কোনো ব্যাপারে অন্যের অপেক্ষায় থাকি? কবে লোকে আমায় প্রশংসা করবে আমি তার অপেক্ষায় হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকব? তবে আর চারদিকে এত আত্মনির্ভরতার চর্চা কিসের? একদমই ভাষণ-টাষন শোনা হয় না দেখছি।

- এটা কোনো যুক্তি হল?

- তবে যুক্তিটা কি শুনি?

- লোকে যারে বড় বলে বড় সেই হয়... কবি লিখেছেন যে…

- এটা যুক্তি না, কাব্য…

- তবু…

- কিচ্ছু তবু না... তুমি জানো না... তুমি মনে মনে অপেক্ষা করে বসে আছ কবে লোকে তোমার প্রশংসা করবে, এই তো?

- না... মানে... এরকম তো কিছু…

- এগুলো স্রেফ ভণ্ডামি... বুঝলে বাবা... আমায় চেনো না... মানুষের মুখ দেখলে আমি বলতে পারি তার অবচেতনের শিলায় কত মণ শ্যাওলা জমেছে... তুমি দুর্বল…

- সে আমি আছি... কিন্তু...

- কোনো কিন্তু না... আমার চিকিৎসার গুণ নিয়ে তোমার কোনো ধারণা নেই... আমার এক হাঁকে এইডসের ভাইরাস আর ইমিউন সিস্টেম এক ঘাটে জল খায়... থুড়ি, এক রক্তে বেঁচে থাকে, সে জানা আছে?

- না…

- কিস্যু জানো না, এসেছ আমায় জ্ঞান দিতে... ওরে আমার মহাপ্রভুর শিষ্য রে…

- আহা, এর মধ্যে মহাপ্রভু কোত্থেকে এলো…

- কেন আসবে না? তৃণাদপি সুনীচেন... এসব থেকেই তো তোমাদের এই নম্র হওয়ার ঢং... যত্তসব…

- তা কেন... নম্র হওয়াটা তো একটা গুণ…

- তুমি কি খাদ্য?

- মানে?

- মানে মানুষ কখন নম্র কিছু চায়? খাবার, তোষক, জুতোর শোল, চটকানোর শরীর... দেখোনি 'আহা! কি সফট্... কি সফট্' বলে ঝাঁপিয়ে পড়ে?... তুমি কি তাই হতে চাও?...

- না তা ঠিক না... কিন্তু ডাসা পেয়ারা?

- সে তো চিবিয়ে ছিবড়ে করে ছাড়বে বলে... তা বলে লোহাতে মধু মাখিয়ে খেতে দেখেছ নাকি হে?

- না তা দেখিনি বটে…

- কেন মানুষের শরীর আয়রণ চায় না?

- চায় তো…

- সেজন্য থোড় খাবে... কিন্তু তবু জানলার রড না…

- কারণ?

- নরম বলে… তা তুমি কি সেই নরম খাদ্য হতে চাও?

- না, তা চাই না।

- তবে ওসব গল্প ছাড়ো... এখন থেকে নিজেকে নিজে বাজাও... নিজের ঢোল থাকতে কেন অন্যের ঢোল বাজাতে যাবে?... যে যার নিজের ঢাক বাজাও…

- লোকে যে নিন্দা করবে…

- অ্যাই... এতক্ষণে একটা খাঁটি কথা বললে নন্দলাল... লোকে নিন্দা করবে... অর্থাৎ সমাজে অ্যাকসেপ্টেড নর্মস-এর বাইরে চলে যাচ্ছ... মানে ভয়… লোকের কাছে অ্যাকসেপ্টেড না হওয়ার ভয়... মানে আসলে এ তোমার নম্রতা না... তোমার ভয়ের ইনসুলেশান... তাই তো?

- তাই কি?

- মানতে অসুবিধা হচ্ছে তো?... এক চটকায় মহত্বের ইমেজটা নষ্ট হয়ে গেল... বুঝি বাবা সব বুঝি... এ সব ন্যাকামি ছেড়ে সরাসরি নিজের গুণের কেত্তন করে বেড়াও না বাপু... যতক্ষণ লোকের নিন্দায় গায়ে ফোস্কা পড়ে ততক্ষণ বুঝতে হবে নিজের উপর নিজের ভরসাটা পাকা হয়নি…

- আপনি সব গুলিয়ে দেন আমার...

- দিই... আসলে তোমরা 'অসীম সত্য... অসীম অস্তিত্ব' --- এই সব বিশ্বাস করে মাথার মধ্যে ঘোঁট পাকিয়ে বসে আছ... আমি ওসব মানি না... আমি জানি শুধু ব্যষ্টি সত্য... বাকিটা অ্যাডজাস্টমেন্ট... মেজরিটির সঙ্গে মাইনরিটির অ্যাডজাস্টমেন্ট... ওসব কসমোপলিটন এক্সিস্টেন্সের ধার আমি ধারি না বাবা... ঢং-এর কথা যত... সব মেজরিটি বনাম মাইনরিটি... তোমরা মেজরিটি আর মাইনরিটি বললেই ভাবো লড়াই... আরে বাবা লড়াই কেন হবে সব সময়...? একটা অ্যাডজাস্টমেন্ট বলেও তো কথা আছে নাকি রে বাবা!... সবাই সারাদিন লড়ে মরতে চায় এটা তোমাদের মত ভীতু টোটালাটেরিয়ানের দল ভাবো... তোমরা যারা সাধু সেজে থাকো তোমরা সব চাইতে বিষাক্ত…

- কি করে?

- আসলে তোমাদের মনে হয় যা কিছু ভালো সব ডিভাইন... মানে তোমাদের হকের সম্পত্তি... মানুষকে তোমরা শুধুই কামুক, লম্পট, মিথ্যাবাদী এইসব ভাবো... এগুলো ভুল... ওখানেও মেজরিটি আর মাইনরিটির সমঝোতা…

- কিভাবে?

- এই ধরো তোমার নেগেটিভ ডেস্ট্রাকটিভ ইনস্টিংক্টগুলো আর তোমার কনস্ট্রাকটিভ ইনস্টিংক্টগুলো..., তুমি কি লড়াই করো রাতদিন এগুলো নিয়ে? যেমন তোমরা তোমাদের ওই ধর্মগ্রন্থগুলোতে লিখে থাকো... আদৌ নয়...। তোমরা আসলে এদের মধ্যে একটা সমঝোতায় আসো…

- কিন্তু বুদ্ধ, খ্রীষ্ট…

- আমি জিনিয়াসদের কথা বলছি না প্রাণকেষ্ট... আমি আমাদের কথা বলছি... ওদের কথা ওনারা জানুন... তারা যে আলাদা এই বোধ তো আছে…

- আছে…

- যা বোঝো তা নিয়ে কথা বলো... ওসব শ্রদ্ধাভক্তি বড় ধোঁয়াশার জিনিস... সেসব দূরে থাক... তুমি বলো যে এই যে তুমি, তুমি রাতদিন লড়াই করছ, না নিজের মনের সাদা কালোর মধ্যে সমঝোতা করছ? শুভের সঙ্গে অশুভের লড়াই - হো হো হো... শুনে হেসে বাঁচি না রে বাবা... কি ভণ্ডামির কথা মাইরি... লড়াই বলে আসলে কিস্যুই হয় না... সমঝোতাই আসল... লড়ে মরে বোকারা…

- কিন্তু সে তো চালাকি…

- রাঁধতে জানো?

- জানি

- সব উপকরণ যদি ঠিক ঠিক অনুপাতে মেশে তবে সে খাবার সুস্বাদু হয়... জানো তো?

- জানি

- আর কি লাগে বলো তো?’

- জানি না

- আর লাগে রান্নার সময় আর আঁচের মান... কতটা সময়ে কতটা তাপে রাঁধবে…

- কিন্তু এর সঙ্গে এগুলোর কি সম্পর্ক?…

- নেই?

- আছে?

- আলবাত আছে... যে সমঝোতা যুগে যুগে সঠিক অনুপাতে হয়েছে তাকে তো তোমরা চালাকি বলো না... তোমাদের পাঁচশো বছরের আগের ধর্মের আইন আর এখনকার আইন এক? কতবার বদলালে না?

- তা বটে…

- তবে? তবে ঠিক ঠিক রান্নায় যেমন সব সুস্বাদু তেমনই ঠিক ঠিক সমঝোতায় সব মোলায়েম... মাখন... চালাকি হল অপক্ক বা আধপক্ক রান্না... বুঝলে... সমঝোতায় গোঁজামিল আছে…

- হুম... মানে দাঁড়ালো সমঝোতাটা চালাকি না... সমঝোতায় গোঁজামিল থাকাটাই হল চালাকি…

- ব্র্যাভো... ব্র্যাভো… এই তো নাগরদোলা ঘুরছে... টপে উঠছ... দেখো ভায়া, যত ঘুরবে তত খেলা জমবে... হতাশ হলে?

- ঠিক তা না... তবে মনটা বিষণ্ণ হল…

- হবে হবে… মানে সমঝোতা এক্সপ্রেস চালু হল… সময় দাও নিজেকে... সময় দাও... ক্রমে নিজের মধ্যে একটা সাম্যাবস্থা আসবে... নেগেটিভ আর পজিটিভ একযোগে না মিললে কি আর সমঝোতা আসে রে বাবা... আসবে, সময় দাও... কিন্তু সে সমঝোতায় কি রাখবে না?

- গোঁজামিল …

- একদম তাই... এসো... ভালো থেকো... আমি বরং এগোই দেখি আর কয়েকটা জায়গায় নিজের গুণকীর্তন না করলেই নয়...

Category