Skip to main content

সাধারণত এরকম স্বপ্ন দেখি না। কি জানি কেন দেখলুম। ফ্রয়েড বলবে, ওই যে তুমি শোয়ার আগে রমিলা দিদির মহাভারতের কথা পড়ছিলে তাই হয় তো হবে।

    সে হবে।

    কিন্তু স্বপ্নটা হল, আমি দেখলাম, ভীষ্ম, মানে আমাদের মহাভারতের ভীষ্ম গো, স্টেশানের পাশে যে কচুরীর দোকানটা আছে না, সেই দোকানের বেঞ্চে বসে, কচুরী খাচ্ছেন, বেঞ্চে পাশেই এক গ্লাস দুধ চা রাখা।

    আমি এমনিতে কচুরী খাই না, অম্বল হয়, কিন্তু কেন জানি আমিও ওই দোকানে গেছি। ভীষ্মকে দেখেই চিনেছি। পাশে বসতে যেতেই, ইশারায় চায়ের গ্লাস দেখিয়ে বললেন, সাবধান।

    খালি গা। দেখি সারা পিঠ খোঁচা খোঁচা। তা হবে না, অদ্দিন শরশয্যায় শুয়ে থাকা। বললাম, টিটেনাস নিয়েছিলেন?

    বললেন, না হে। রোজ একটু করে বিটাডাইন লাগাই শুতে যাওয়ার আগে, ওতেই শুকাচ্ছে।

    আচ্ছা, ধরুন স্বপ্ন না হয়ে এটা যদি বাস্তব হত, তবে লোকে কুশলমঙ্গল কিছু তো একটা জিজ্ঞাসা করত নাকি? আমার সে সব প্রশ্ন মাথাতেই এলো না। সটান জিজ্ঞাসা করলাম, তা কাশীতে বাবার মন্দির উদ্বোধনে যাচ্ছেন? আমাদের প্রধানমন্ত্রী আসছেন, উনিই বোধায় নেমন্তন্ন-টন্ন করলেন, নাকি?

    ভীষ্ম মাথা নেড়ে বললেন, না রে ভাই, সে সব না। মন্দিরে যাওয়ার সময় সারা জীবন আর পেলুম কোথায়? শীতে যেমন পরিযায়ী পাখিরা আসে, তেমনই আরকি আমিও এসেছি। তবে আজকাল দেখছি তোদের দেশেও আমার মত প্রতিজ্ঞা নেওয়া লোক বাড়ছে, এ প্রধানমন্ত্রী, রতন টাটা, সলমন, রাহুল, বেশ সব মান্যগণ্য লোকেরাও দেখছি...

    আমি বলতে গেলাম, আমিও...

    আমায় থামিয়ে দিয়ে বললেন, চুপ কর.. কাদের সঙ্গে নিজের তুলনা...

    আমি লজ্জা পেয়ে বললাম, আমাদের দিদি....

    ভীষ্ম বললেন, তা বটে, তা বটে....

    আমি সুর চড়িয়ে আরো বলতে গেলাম, তা ছাড়া আমাদের দেশের কত মানুষ বড় বড় কোম্পানির সিইও হচ্ছে জানেন... কি গর্বের কথা না?

    ভীষ্ম চায়ে চুমুক দিয়ে বললেন, নাহ্, যেদিন তোরা বড় কোম্পানি খুলবি ওদের মত, সেদিন একটা বড় কথা হবে.. শুধু চালক হলে হবে? মালিক হবি না? যুধিষ্ঠিরের সঙ্গে আমার কথোপকথনটা পড়েছিস তো? শান্তিপর্বে?

    বলতে যাচ্ছিলাম, হ্যাঁ পড়েছি... হঠাৎ একটা ছোকরা মত ছেলে এসে বলল, চলুন..

    ভীষ্ম হেসে বললেন, এ হল সহদেব বাবা... তেমন ফেমাস হতে পারল না…. সাইড রোল, তাই চিনিস না….

    আমি বললাম, কোথায় যাবেন?

    ভীষ্ম বললেন, দেশটা একটু ঘুরে দেখব, কোথায় যেন একটু অচেনা অচেনা লাগছে… তা যুধিষ্ঠির বলল, যান না, একটু ঘুরে আসুন... নিজের চোখে দেখে এসে জানান….

    আমি বললাম, কৃষ্ণ এলেন না?

    ভীষ্ম হাসলেন। বললেন, বোকা... এতক্ষণ কচুরীটা কে ভাজছিল রে… তাকিয়ে দেখ…

    আমি হতবাক হয়ে দেখি কৃষ্ণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কচুরী ভাজছেন... আমার চোখে চোখ পড়তেই বললেন, মেলা ভ্যাজভ্যাজ না করে কচুরীগুলো সার্ভ কর…. শালাগুলো কাজ না করে করে, সারাদিন বক্তিমে করে আর পেস্টিজ সামলিয়ে মরলি…. রাস্তায় নাম... রাস্তায় নাম…. রাস্তা মানে ব্রিগেড না... রাস্তা মানে স্লোগান না... রাস্তা মানে রাস্তা... যার দু’দিক খোলা অনন্তে…

    ভীষ্ম হাসতে হাসতে বলল, চিনলি না তো... শালা রাতদিন মন্দিরে মন্দিরে ঘুরলে মিলবে কি করে র‍্যা.... ও কি মন্দিরে থাকার রে? বোকা কোথাকার!

    ঘুম ভেঙে, স্বপ্ন ভাঙল। জানলা দিয়ে রোদ এসে পড়েছে ঘরে। ঘরের মধ্যেই রোদ আসে এত লক্ষ যোজন পথ পেরিয়ে, রোদের জন্য আমি কি তৈরি থাকি?