এত রাতে দোকান খোলা রাখেন?
রাখতেই হয়। ওই যে মোড়টা দেখছেন, বড় লাইটটা জ্বলছে, ওর থেকে কয়েক মিটার গেলেই শ্মশান। রাতে কোনো দোকান খোলা থাকে না। শ্মশানযাত্রীরা চা'টা খেতে সব এখানে। সবাই জানে বলাইদার দোকান সারারাত খোলা। বাইকে বসেই চা খাবেন? ভিতরে আসুন।
আচ্ছা ঠিক আছে। আসলে এদিকে নতুন। আমি যাচ্ছি হরিবিলাসপুর।
ও... সে তো বাইকে এখনও আধঘন্টা... কেউ থাকেন?
আমার দিদির বাড়ি। অফিসের কাজে রাধাগঞ্জে এসেছিলাম... দেরি হল... তাই...
হঠাৎ হইচই আওয়াজ। একদল শ্মশানযাত্রী এলো।
বাবাই জুলজুল করে তাকিয়ে সবার দিকে। সবাই চেনা মনে হচ্ছে দোকানির। বলাই খোশমেজাজে গল্প করছে চা বানাতে বানাতে। কে বলবে রাত এগারোটা বেজে গেছে। শীতের রাত, তায় এরকম গ্রাম। বাবাই মেডিকাল রিপ্রেজেনটেটিভ। রাধাগঞ্জে কেস মেটাতে মেটাতে রাত হয়ে গেল।
জামাইবাবুর ফোন....
কি হে কদ্দূর?
এই তো রমেশদা একটা চায়ের দোকানে... চা খাচ্ছি...
এত রাতে? তুমি কি গোপীবল্লভপুরে বলাইদার চায়ের দোকানে?
হ্যাঁ... চেনো তুমি?
ফোন কেটে গেল। বাবাই ফোন রেখে তাকিয়ে দেখল সবাই তার দিকে কিভাবে যেন তাকিয়ে। সবাই চুপ। আচমকা দেখল সে দোকানে নেই। সে শ্মশানে দাঁড়িয়ে। সামনে একটা চিতা জ্বলছে। যে পুড়ছে সে তার দিকে তাকিয়ে। হাসছে যেন। বাকিরাও চায়ের কাপ নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে। তাকে ঘিরে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে।
বাবাই কিছু বুঝতে না পেরে মোবাইলটা অন করল। কি আশ্চর্য, স্ক্রীণে জ্বলন্ত চিতায় শুয়ে এ তো বলাইদা.... কি করে... কিন্তু কি করে? বলাইদা হঠাৎ একটা জ্বলন্ত হাত বাড়িয়ে বাবাইকে ধরতে গেল.. বাবাই নিজেকে ছাড়াতে গিয়ে হুড়মুড় করে পড়ল। সে পড়তেই বাকিরা সবাই হুল্লোড় করে বলে উঠল, নে নে কাঠ সাজা... চিতা জ্বালা... পুড়ুক পুড়ুক..... অনেকদিন পর টাটকা মাংসের গন্ধ.....
বাবাই দেখল সবার সাজপোশাক বদলে কেমন কাপালিকের মত হয়ে যাচ্ছে। তারা চীৎকার করে বলছে, ওরে আমরা কারা জানিস? আমরা অঘোরপন্থী.... আমরা নরমাংস খাই.... আয় আয়... জ্বাল চিতা... জ্বাল....
কোথায় যেন কেউ ঢাক বাজাচ্ছে। বাবাই চোখ মেলে তাকালো। ঢাক না, দরজায় ধাক্কা দিচ্ছে দিদি। বাবাই চটপট উঠতে গিয়ে খাটের থেকে বইটা পড়ে গেল... "অঘোরপন্থীর ইতিবৃত্তি"....