Skip to main content

 

প্রশংসা নিন্দা কদ্দিনের? কত গভীরেই বা যায়? যদিও প্রশংসার চাইতে নিন্দা গভীরে যায় বেশি। তাপ উৎপন্ন করে। আঘাত করে। কিন্তু সেও কি খুব গভীরের? চাইলেই কি ঝেড়ে ফেলা যায় না? যদি আরেকটু জোর করা যায়?

যায়। প্রশংসা নিন্দা দুই-ই ক্ষণস্থায়ী। মনে থাকে না। জোর করে মনে করে রাখতে না চাইলে। কিন্তু সে জোর করে মনে রেখেই বা কী সুখ?

নিজেকে আলগা দিয়ে যদি দেখি, কী চোখে পড়ে? আনন্দ। যা ছুঁয়ে গেছে। যা হৃদয়ের এমন তন্ত্রীকে আঘাত করে গেছে যে সে আঘাতটা না পেলে জানতামই না আমারই চিত্তকোষে এমন আনন্দের আয়োজন ছিল। কোনো গান, কি কোনো কবিতা, কি কোনো সিনেমার দৃশ্য, কারুর একটা কথা, বা হাসি, বা অশ্রু….. ছুঁয়ে যায়নি?

গেছে তো ছুঁয়ে। মনকে যদি আলগা দিয়ে দেখি, সেই দাগেই তো ছুপানো সে সময়ের বুনটে। কী অদ্ভুত এ খেলা এ না?

সেই কথাই সেদিন মহাপ্রভু বলেছিলেন। ভালোবাসা কি জাতপাত মানে, না বেদের হেনাতেনা? কিস্যু না। দুটো বিন্দু বিন্দু জল সামান্য ধুলিতেও পড়ে কাদাটাদা হয়ে একাকার হয়। কিন্তু সেই বিন্দু বিন্দু জলের ধারা যদি পড়তেই থাকে, পড়তেই থাকে তবে দিনে দিনে সে পাথরকেও ক্ষয় করে দেয়। পরমানন্দের প্রেম সেই বিন্দু বিন্দু ধারার মত। উচ্ছ্বাস নেই। বিহ্বলতা নেই। শান্ত ধারার মত প্রাণে এসে পড়ছে। প্রাণটা একটু ঢালু করে পাতলেই হয়। তবে সে বিন্দু নেমে নেমে অমৃতের কুম্ভ তৈরি করবে। সে প্রেমের ভাণ্ড হাতে মহাপ্রভু। আজও।

আমার ভালোবাসা তাঁর ভালোবাসাকে টেনে আনে। এ কথা আমাদের রবীন্দ্রনাথ গানের পরে গানে গেয়ে গেছেন তো। আমি যদি সুর আর কথা ছেনে সে অমৃতের ধারায় একবার স্নান সেরে নিতে পারি, ক্ষতি কী? দিনদুনিয়ার কাজ তো আছেই। আমি থাকলেও আছে, আমি না থাকলেও আছে। কিন্তু সেই ধারায় স্নান না করলে যে শান্তি নাই। জগত শান্তির তোয়াক্কা করুক না করুক, আমি তো করি। প্রাণের জ্বালা জুড়ানো শান্তি। হিংসা, রাগের কলকলানো জুড়ানো শান্তি।

মহাপ্রভু বলছেন, কেন বিদুরের ঘরে শ্রীকৃষ্ণ ভোজন করেছিলেন, কেন? কারণ, “ওই স্নেহবশ হঞা করে স্বতন্ত্র আচার”। প্রশংসা নিন্দা, স্তবস্তুতি দুদিনের জন্য। কিন্তু আনন্দ? সে দশদিকের দরজা খুলে দিলে আসে। নিজেকে ছাড় দিলেই আসে। নিজেকে ঢালু করলেই আসে।

 

“প্রভু কহে ঈশ্বর হয় পরম স্বতন্ত্র।

ঈশ্বরের কৃপা নহে বেদপরতন্ত্র ।।

ঈশ্বরের কৃপা জাতিকুলাদি না মানে।

বিদুরের ঘরে কৃষ্ণ করিল ভোজনে ॥

স্নেহলেশাপেক্ষা-মাত্র ঈশ্বর-কৃপার।

স্নেহবশ হঞা করে স্বতন্ত্র আচার ।।

মর্য্যাদা হৈতে কোটিসুখ স্নেহ-আচরণে।

পরম আনন্দ হয় যাহার শ্রবণে ৷৷”

~ চৈতন্য চরিতামৃত।