সৌরভ ভট্টাচার্য
23 November 2014
ওনার স্বর্গস্থ পিতার আবির্ভাব। মূর্ছা লেগে প্রায় দাঁতকপাটি লেগে যায় আরকি, তিনি বুদ্ধি করে চিনি গোলার চামচটা দাঁতের ফাঁকে ভরে নিয়েছিলেন। তা হবে না, এত দিনের মিলিটারি ট্রেনিং বলে কথা!
তা জ্ঞান ফিরতে দেখেন ওনার বাবা বসেই আছেন। পাকড়াশীবাবু চোখ মেলতেই তিনি বললেন, "কেমন বোধ করছিস খোকা? তা মুচ্ছো তো যাবিই বল কতদিন পর দেখা!"
পাকড়াশীবাবু কি একটা বলতে যাচ্ছিলেন। ওনার বাবা থামিয়ে দিয়েই বললেন, "বেশিক্ষণ থাকতে পারবনি বাপু, কাজের কথাটা সেরে নিই, তুই বড়বাজারে গিয়ে একখানা গড়গড়া এনে দিস তো কাল। নারদ ব্যাটা আমার আগের গড়গড়াটা সেই যে নিয়েছে তো নিয়েইছে, ফেরৎ দেবার নাম নেই। আমি এই সময়টায় একটু হাঁটতে, থুড়ি ভাসতে বেরোই। এক ফাঁকে এসে নিয়ে যাব। তুই ছাদের ওই ঈশাণ কোণে রেখে দিস।" বলেই তিনি হাপিশ।
এর পর পিসির নস্যি, জেঠুর দোক্তা, শ্বশুর মশায়ের ইসবগুল, শাশুড়ির জর্দা ইত্যাদির ফরমাশে প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে উঠেছে পাকড়াশীবাবুর। বলা বাহুল্য এনারা কেউই আর ইহলোকের বাসিন্দা নন এখন। একবার পাকড়াশীবাবু ঠিক করলেন ধুস, আর উঠবেনই না ছাদে। উঠলেনও না। শুরু হল আরেক উপদ্রব। ছাদে সে কি ধুপধাপ আওয়াজ। বাড়ির লোক ত্রস্ত। যদিও তারা বিশদভাবে কিছু জানেন না, এমনকি পাকড়াশীবাবুর স্ত্রীও না।
পাকাড়শীবাবুর আশ্চর্য্যের সীমা রইল না, যেদিন তাদের গ্রামের গরু, শ্যামলী অবধি দেখা করতে এল পরলোক থেকে। তার চাই সরু সরু বিচুলী। স্বগ্গের পরমান্ন খেতে খেতে তার নাকি অরুচি ধরে গেছে।
যা হোক তাও আনা হল। পাকড়াশীবাবুর তো এবার নাভিশ্বাস ওঠার অবস্থা। তিনি যন্ত্রটাকে নানান ওঝা দেখালেন। কোনো ফল হল না। অগত্যা একদিন ভোরবেলা উঠে গঙ্গায় গিয়ে বিসর্জন দিয়ে দিলেন। গঙ্গাস্নান সেরে বাড়ি ফিরলেন প্রসন্ন মনে।
কিন্তু মন আকাশের গ্রহ-নক্ষত্র ছাড়া ঘরে টিকছেও না। অগত্যা ছ'মাস যেতে না যেতেই আরেকটা নতুন দূরবীন কিনলেন। কয়েকমাস বেশ নির্বিঘ্নেই কাটছিল।
সেদিন তিনি ধ্রুবতারার গতিতে মননিবেশ করেছেন, এমন সময় তাঁর পুরোনো দূরবীনটা হাজির। বলল, "আমায় জলে ফেললে কেন? কি কষ্টে যে মরেছি যদি দেখতে।"
পাকাড়াশীবাবু দরদর করে ঘামতে শুরু করেছেন। জড়ানো গলায় বললেন, "কি চাও?"
সে বলল, "তোমায়।"
(ছবিঃ সুমন দাস)