Skip to main content

জানলায় একটাও বেড়াল নেই। রোদ এসে পড়েছে। কিন্তু ওরা কোথায় গেল?

সংযুক্তা, মানে পাড়ার অ্যান্টেনা ঠাম্মা দরজা খুলে রাস্তায় এসে দাঁড়াল। অ্যান্টেনা ঠাম্মা, কারণ এই বাড়িতেই অনেকদিন অবধি অ্যান্টেনা লাগানো টিভি চলত।

রতন সব্জীর ভ্যান নিয়ে বের হচ্ছিল। বলল, কি গো ঠাকুমা, আবার বেড়াল?

সংযুক্তা কথা বলল না। চশমাটা আবার নাকে সাঁটিয়ে, হাতের লাঠিটা রাস্তায় দুবার ঠুকে বলল, যাচ্চলে.... মরুক গে যাক।

সারাদিন টুক টুক করে কাজ করে, আর জানলার দিকে তাকায়। কই গেল?

দুপুরে ভাত কম খেল। মাছ তো মুখেই দিল না। দুপুরে জানলার দিকে তাকিয়ে বসে থাকল। এত বেলা তো করে না। গীতা পড়ল। চণ্ডী পড়ল। রামায়ণ পড়ল। মন বসল না। টিভি চালালো, মন গেল না। জানলায় কাক বসছে, পোকা বসছে, বেড়ালগুলো কোথায়?

সন্ধ্যেবেলা জানলা বন্ধ না করলে পোকায় ঘর ছেয়ে যাবে। সে যাক। জানলাটা খুলেই বসে থাকল। পাড়ায় বারের ঠাকুরের কাছে কুড়ি টাকার মানত করল। সে মানত রাত দশটায় পাঁচশো হয়ে দাঁড়ালো। তাও নেই।

রাতে আগেই মশারি টাঙালো। এত পোকা ঘরে। একমুঠো মুড়ি খেয়ে শুয়ে পড়ল আলো নিভিয়ে। জানলাটা খোলা। রাস্তার আলো এসে পড়েছে।

ঘুম এসে গেল। স্বপ্ন দেখছে বারের ঠাকুর আর কৃষ্ণ বেড়াল খুঁজতে হাওড়া ব্রিজ, ময়দান, মায় সুন্দরবন অবধি খুঁজে বেড়াচ্ছে। শেষে কিনা পাওয়া গেল ভিক্টোরিয়াতে। মাঠে বসে বসে হাওয়া খাচ্ছে তার বরের কোলে বসে। তার বর বলছে, আহা সুনু, এত ভাবো কেন, এই তো আমি আছি। তোমার বেড়াল, তোমার তুমি সব আমি সামলে রেখেছি। কাল সকালেই ফিরিয়ে দেব। দেখবে কুয়োতলায় বসে আছে।

ঘুম ভেঙে গেল ভোরে। মশারি থেকে নেমে, লাঠিটা খুঁজে কুয়োতলায় এসে দেখে সত্যিই তো তিনটে বেড়ালই বসে। আনন্দে চোখে জল এলো। শুধু বেড়ালের জন্য না। আরো কিছু।

বিকালে একটা ট্যক্সি ডেকে ভিক্টোরিয়া এলো। নতুন শাড়ি পরেছে। একবারই পরেছে অষ্টমীর দিন। সাধ করে কেনা। একটা ফাঁকা জায়গা দেখে বসল। বেড়ালগুলোকে খেতে দিয়ে ঘরে তালা দিয়ে এসেছে।

সন্ধ্যে অবধি বসে থাকল। আইসক্রিম খেলো। কোলড্রিংক্স খেলো। আরো এটা সেটা খেলো। জয়ন্ত, মানে তার বর, এখানে থাকে আগে বলেনি তো! অবশ্য বরাবরই ওর এই জায়গাটা ভীষণ প্রিয় ছিল। বারবার চোখে জল এলো। বেশি শীত শীত করল। পুরোনো কথা সব যেন শাড়ির কুচির খাঁজে খাঁজে লেখা। সঙ্গে চলে, কিন্তু আড়ালে। সব শেষে বেড়ালগুলোর জন্য খাবার কিনে বাড়ি এলো।

বাড়ি ফিরে যখন সারাদিনের হিসাব করতে বসল, তাজ্জব হল, খরচ হয়েছে ঠিক পাঁচশো টাকা। কিন্তু সে তো বারের ঠাকুরের নেওয়ার কথা ছিল। অবশ্য তা তো নয়, যে বেড়াল খুঁজে দেবে তার। হাসি পেলো। মনে মনে বারের ঠাকুরকে বলল, বেশ, তোমায় আমি না হয় এই শনিবার দশ টাকার গুজিয়া কিনে দেব।

তিনটে বেড়ালই একসঙ্গে বলে উঠল, ম্যাও। সংযুক্তা হাসল। বলল, তাই না রে?!