গীতায় পড়েছিলাম, শ্রীকৃষ্ণের বিশ্বরূপ দর্শনের ঘটনা। তা অর্জুন তো অত অত ভয়ানক মূর্তি দেখে আঁতকে উঠে, হাতজোড় করে শ্রীকৃষ্ণকে বারবার রিক্যুয়েস্ট করে "মনুষ্য" রূপ দেখলেন এবং আশ্বস্ত হলেন। কিন্তু আমার কি হবে?
আজ সকাল থেকে দেখছি রবীন্দ্রনাথের বিশ্বরূপ। নানা জনে আঁকছেন। শিশু আঁকলে হত। কিন্তু তা না, শিশুর বাবা মা, কাকা কাকি, জেঠা জেঠি, দাদা দিদি ইত্যাদি সবাই আঁকছেন আর টাইমলাইনে সাঁটাচ্ছেন।
কোনো রবীন্দ্রনাথ আমাদের পাড়ার মাছওয়ালার মত। কোনো রবীন্দ্রনাথ আমার স্বর্গত মেশোমশাইয়ের মত। কোনো রবীন্দ্রনাথ আমাদের স্কুলে যিনি ঘন্টা বাজাতেন সেই শ্যামলদার মত। কোনো রবীন্দ্রনাথ আমার ছোটোবেলার সালকিয়ার মুদির দোকানের জহরদার মত। মায় যখন এক রবীন্দ্রনাথ 'বাঙালি'-র মত হল, তখন আমার অর্জুনের মত কেঁদে বলতে ইচ্ছা করল, "ভয়েন চ প্রব্যথিতং মনো মে"... মানে আমার প্রাণ ভয়ে ও ব্যথায় জর্জরিত হয়ে যাচ্ছে প্রভু, তুমি আবার দেবেনবাবুর পোলা রবীন্দ্রনাথ হয়ে সামনে এসো প্রভো। এখন কথা হল, এ 'বাঙালি' মানে কে? আমরা যখন রেলকলোনিতে থাকতাম, তখন এক বিহারি জমাদার আসত নর্দমা পরিষ্কার করতে। তাকে আমি কোনোদিনই বাহ্যদশায় দেখিনি। কারণবারির সহযোগে নয় অর্ধবাহ্য, নয় অন্তর্মুখেই থাকতেন। তো কি করে যে তার নাম 'বাঙালি' হল সে আমি জানি না। কিন্তু আজ এক ছবিতে অমন ঢুলুঢুলু 'বাঙালি'র চোখের মত রবীন্দ্রনাথের ছবি দেখেই আমার প্রাণান্তকর অবস্থা হল আর কি।
অবিশ্যি এ নতুন কিছু না। ছোটোবেলা থেকে এত নানা ছবি, মূর্তি ইত্যাদিতে রবীন্দ্রনাথের নানাভাব দেখেছি সে অবশ্যই সুখকর নয়। তবে পঁচিশে বৈশাখে ফেসবুক পেজ সে সবের ঊর্ধ্বে।