Skip to main content

রবীন্দ্রনাথে ফেরার দরকার হয় না, রবীন্দ্রনাথে তো বাস। 'নৈবেদ্য' যখন রিফ্লেক্ট পাবলিকেশান সাত টাকায় বার করল, প্রায় দুশো কপি কিনে ফেললুম। যে আসে তাকেই দিই। যেন সদ্য বেরোনো কোনো কবির কাব্যগ্রন্থ। কেন? জানি, আবার জানি না। যেটা জানি সেটা হল, এ কাব্যগ্রন্থ অনেক ঝড়ের রাতে আগলে রেখেছে। যা জানি না তা হল কি করে আগলে রেখেছে তা বুঝি না। সব বোঝার কি ব্যাখ্যা হয়? তবে তো 'মা' শব্দটা উচ্চারণ করতেই ফুরিয়ে যেত। ফুরিয়ে যায় না বলেই এই একটি শব্দেই জগত দাঁড়িয়ে যায়। 

    নৈবেদ্য কাব্যগ্রন্থে একশোটা কবিতা আছে। আমার সব চাইতে প্রিয় কবিতাটা আজ বলতে ইচ্ছা হল। কেন ইচ্ছা হল? জানি না। কিম্বা হয় তো জানি। নিজের অক্ষমতাকে, অপারগতাকে নিজের বলে মেনে নেওয়ায় স্বস্তি আছে। শান্তি আছে। সেইটুকু পেরে গেলেই সংসারে শান্তিটুকু থাকে। যা হোক অনেক বকেছি, কবিতাটা পড়ি। 

সংসারে মোরে রাখিয়াছ যেই ঘরে
সেই ঘরে রব সকল দুঃখ ভুলিয়া।
করুণা করিয়া নিশিদিন নিজ করে
রেখে দিয়ো তার একটি দুয়ার খুলিয়া।
মোর সব কাজে মোর সব অবসরে
সে দুয়ার রবে তোমারি প্রবেশ-তরে,
সেথা হতে বায়ু বহিবে হৃদয়-'পরে
চরণ হতে তব পদরজ তুলিয়া।
সে দুয়ার খুলি আসিবে তুমি এ ঘরে,
আমি বাহিরিব সে দুয়ারখানি খুলিয়া।
আর যত সুখ পাই বা না পাই, তবু
এক সুখ শুধু মোর তরে তুমি রাখিয়ো।
সে সুখ কেবল তোমার আমার প্রভু,
সে সুখের 'পরে তুমি জাগ্রত থাকিয়ো।
তাহারে না ঢাকে আর যত সুখগুলি,
সংসার যেন তাহাতে না দেয় ধূলি,
সব কোলাহল হতে তারে তুমি তুলি
যতন করিয়া আপন অঙ্কে ঢাকিয়ো।
আর যত সুখে ভরুক ভিক্ষাঝুলি
সেই এক সুখ মোর তরে তুমি রাখিয়ো।
যত বিশ্বাস ভেঙে ভেঙে যায়, স্বামী,
এক বিশ্বাস রহে যেন চিতে লাগিয়া।
যে অনলতাপ যখনি সহিব আমি
দেয় যেন তাহে তব নাম বুকে দাগিয়া।
দুখ পশে যবে মর্মের মাঝখানে
তোমার লিখন-স্বাক্ষর যেন আনে,
রুক্ষ বচন যতই আঘাত হানে
সকল আঘাতে তব সুর উঠে জাগিয়া।
শত বিশ্বাস ভেঙে যদি যায় প্রাণে
এক বিশ্বাসে রহে যেন মন লাগিয়া।