সৌরভ ভট্টাচার্য
31 May 2016
বিষাদ ছিল। একা ছিল। তার চারপাশে কথা ছিল। কথাগুলো অন্ধকার ছিল। তার চারপাশে হাসি
ছিল। হাসিগুলো চাদর ঢাকা ছিল। বিষাদ ছিল। একা ছিল। ঘরে ডানদিক বাঁদিক সামনে পিছনে
পর্দাঘেরা ছিল। ঘর অন্ধকার ছিল।
বিষাদ পর্দা সরিয়ে বাইরে তাকাত। কাউকে খুঁজত। পথের পিচে রোদের ছায়া দেখত। জমা জলে
ধুলো দেখত। পথচলা মানুষগুলোকে শূন্য দেখত। সব কিছু অর্থহীন মনে হত। বিষাদ কাঁদত
না। কান্নাকে বাচ্চাদের মন ভোলানো খেলনা মনে হত।
বিষাদ একলা একলা আয়নার সামনে দাঁড়াত। আয়নার পিছনে আয়না, তার পিছনে আয়না, তার পিছনেও আয়না দেখত। সব আয়নায় তার মুখ। চোখের
কোলে কালি। চোখের মধ্যে খাঁ খাঁ দুপুরের মাঠ। মুখের উপর কালোপর্দার ছায়া। আয়নার পর
আয়না, আয়না পর আয়নায় একই ছবি।
বিষাদ পায়ে আলতা পরত। রক্তের রঙে হাঁটতে চাইত।
মৃত্যুকে সে বুঝতে চাইত। তবু পর্দা তুলে রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকত। কারোর যেন আসার
কথা - এই কথাটা মনে রেখেই ভুলতে চাইত।
সে এলো না। কে? জানি না। বিষাদ একদিন মারা গেল। কেউ
জানল না। কেউ কাঁদল না। বাড়ির পর্দা না। অন্ধকার না। ডানদিক বাঁদিক সামনে পিছন -
কেউ কাঁদল না। বিষাদ অন্ধকারে হারিয়ে গেল।
বিষাদের বাড়ির কার্ণিশে একটা ছোট্ট
পাখি ডিম দিয়েছিল। তার ডিম ফুটে পাঁচটা বাচ্চা হয়েছিল। তাদের অনেকরকম রঙ। তিনটে
গেল ঝড়ের রাতে। একটা খেল বিড়ালে। মা পাখিটা একটাকে নিয়ে বিষাদের ঘরে ঘর বাঁধল।
অন্ধকার বলল, এসো। পর্দা বলল, ঢাকো। ধুলো বলল, ডাকো।
মা পাখি বলল, না না না। ওরা সবাই চলে গেল।
মা পাখি তার বাচ্চার ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়াল। বাইরের আলো ঘরের আলোর বুকে এলো।
এক 'না'তেই সব অন্ধকার দূরে গেল। বিষাদকে বলো "না", অন্ধকারকে বলো,
"না"। তবেই তুমি আলোয় আলো - পাখির মা, পাখির বুকে ঠোঁট ছোঁয়াল। বেঁচে
থাকার মন্ত্র দিল।