- আচ্ছা, আমায় বলো, মনকে যদি অকম্পিত স্থির প্রদীপের শিখার মতই করবার কথা ছিল তবে এত রূপ-রস-গন্ধ সৃষ্টি হল কেন? তোমার চাইতে তো গৌতমদাই ভালো কথা বললেন, প্রদীপ নিভিয়ে ফেলো, সেই হল নির্বাণ। তুমি তো বড় ফ্যাচাং করলে! এদিকে বলো প্রদীপ জ্বলে থাকুক, ওদিকে বলো কিন্তু সে যেন স্থির থাকে, বলি তাই কি হয়?
- হয় না?
- হয় না-ই তো। সে তুমি যতই অর্জুনকে বাগে পেয়ে বোঝাও না কেন যে অভ্যাস আর বৈরাগ্যের দ্বারা নাকি অমন মন হয়েই যায়, আচ্ছা বলো তো তোমার হয়েছিল?
- আমার কথা থাক। কিন্তু যাকে ভালোবাসো তাতে মন স্থির থাকে না রাতদিন?
- থাকে।
- তাকে ছাড়া আর কিছু মনে ধরে?
- না।
- তবে অভ্যাস আর বৈরাগ্য হল তো? তাকে ভেবে যাচ্ছ, এ অভ্যাস, আর তাকে ছাড়া কিছু ভালো লাগছে না, এ বৈরাগ্য। হল না?
- ছাই হল। মনে সুখ কই?
- সে তো অন্য গল্প।
- মানে?
- মানে এইবার তো তুমি তাকে পেতে চাইছ... নিজের দখলে…
- ভালোবেসে নিজের করে চাওয়া, কি কাছে চাওয়া কি দখল হল?
- হল বইকি। তুমি নদী, পাহাড়, সমুদ্র, বাতাস, আকাশকে ভালোবাসলেও নিজের করে পেতে পারো?
- আবার সেই তোমার বদখদ যুক্তি, বলি ওগুলো কি মানুষ? ওরা তো অচেতন।
- সত্যিই কি তাই? এরা তোমার সঙ্গে কথা বলে না ভালোবাসলে? তোমার ওদের জন্য মন খারাপ করে না? ওরা ডাকে না তোমায়?
- সে সবই হয়…
- সেকি জড় বলে হয়?
- না, তা নয়….
- সেরকম মানুষ কি একটা শরীর, না একটা মন? মানুষ একটা হৃদয়। একটা অনুভব। অনুভবের কোনো সীমা হয়? মাপা যায়? তাকে ধরে রাখা যায়?
- না, তা যায় না
- কিন্তু তুমি তাই চাও…. একটা শরীর মনকে বেঁধে ফেলে ভাবলে তাকে পেলে। তার অনুভবকে কি পেলে? যত বাঁধতে যাও, যত কাছে ধরে রাখতে চাও, তত অনুভবের আসা যাওয়ার সহজ রাস্তাটা আটকাও। তখন যা থাকে সে শুধু অভ্যাস।
- তবে ঠিক কোনটা?
- ডুব দাও, কিন্তু ডুবুরি হয়ে নয়, যে জলে ডোবে মুক্তার লোভে, পাড়ে এসে ব্যবসা করবে বলে…
- তবে?
- ডুব দাও, মুক্তা হবে বলে।