মা, বিসর্জনের সময় হল।
মা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললেন, হ্যাঁ বাবা তা হল। তা এখনও তো দেরি আছে, এত তাড়াতাড়ি এলে? আর এত উদ্বিগ্নই বা দেখাচ্ছে কেন?
ভক্ত বলল, মা গয়নাগুলো খুলে নিতে হবে। হিসাব মেলাতে হবে। না মিললে বুঝতেই তো পারছ....
মা ভক্তের চোখের দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকালেন। এ গয়নাগুলো জলে দেবে কী করে? মাটি দেওয়া যায়। সোনা, হীরে কি দেওয়া যায়?
মা বললেন, আচ্ছা বাবা, নাও। আমি তো কোনোদিনই প্রতিবাদ করি না। তোমরা যা যখন দাও, পরি। আবার যখন খুলে নাও, দিয়ে দিই। আজ অবধি বলেছি, দাও কানের দুটো অন্তত, কৈলাসে নিয়ে যাই? বলিনি তো। নাও, নাও। সব আভরণ খুলে নাও।
ভক্তেরা উঠেপড়ে লেগে গেল একটা একটা গয়না খুলে নিতে।
এ সব অপলক দৃষ্টিতে দেখছিল খগেনের মা। বন্ধ দোকানের সামনে উবু হয়ে বসে বসে। দেখতে দেখতে চোখে জল ভরে এলো, বলল, মা, চুপচাপ চলে যা। যারা গয়না দেখতে আসার আবার ফি বছর গয়না দেখতে আসবে। একটু কম পড়লেই চোখ পাকাবে! আমিও চলে এসেছি। খগেন আমার নাকেরটাও দেয়নি। তুইও চলে যা।
খগেনের মা উঠল। সন্ধ্যে হব হব। স্টেশানে বসবে ভিক্ষায়। একে একে তারা ফুটবে। শেষ ট্রেন চলে যাবে। মা ফিরে যাবে তারার উপর পা রেখে রেখে। তারার আলো বিঁধবে পায়ে। তার বুকে যেমন খগেনের উপর, নাতির উপর ভালোবাসা বেঁধে। তবে তার যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। কদিন ফাঁকা প্যাণ্ডেলের আশেপাশে ঘুরবে। একদিন সব আবার স্বাভাবিক লাগতে শুরু করবে। মা, ভালো থেকো। সব ভুলে গিয়ে ভালো থেকো।