এই মেঘলা আকাশেই সে যাবে
যে শাড়িটা গেলবার পূজোয় কেনা, ভাঙা হয়নি
সেই শাড়িটাই পরে যাবে
যে বাড়ির পরিচারিকা সে
সে বাড়িতে মঞ্জুর হয়েছে তিনদিনের ছুটি
কল্যাণী থেকে যাবে কলকাতা
মেয়ের নিজের বাড়ি
ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি এলো
তিপান্নটা বর্ষা পেরোলো
মুখের ভাঁজে হাল্কা পাওডারের দাগ
মাথার মধ্যেখানে সাদা দাগের রেখা
লালদাগটা শুকিয়েছে
শুকাতে শুকাতে পুড়িয়েছে অনেক
টোটোর একটা পাশে বসে উদাস তাকিয়ে মহিলা, পরিচারিকা
মেয়ের বাড়ি প্রথমবারের যাওয়া।
জামাই আসবে নিতে। ক্যাটারারের কাজ করে।
তাছাড়া কলকাতার কোন হাস্পাতালে যেন কি একটা সাপ্লাইও করে
শিয়ালদায় দাঁড়াতে হবে, এনকুয়ারির কাছে
মহিলা পার্সে রাখা চিরকুট বার করে
মোবাইল নাম্বারটা দেখে
বৃষ্টির ফোঁটা লাগল চিরকুটে
একটা সংখ্যা ভিজে গেল
নাম্বার লেখা কাগজটা মুড়ে ঢোকালো পার্সেতে
এই একটা নাম্বার
আচ্ছা, হারিয়ে যায় যদি?
মেয়েও কি তবে হারিয়ে যাবে?
নাকি সে ফিরবে কোনোদিন
কি করে খোঁজ পাবে?
বুকের ভিতর মুচড়ে ওঠে
পার্সটাকে বাঁ স্তনের সাথে চেপে
আঙুল দিয়ে ছুঁয়ে দেখে
মেয়ের শরীর ছুঁলো যেন
শান্ত হয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে
বড়লোকদের বাড়ি ভিজছে,
ওই যে বাক্স বাক্স, ওগুলো মানে ঘরের ভিতর এসি
ওই যে ছাতার মত, ওগুলো মানে টিভি
ভিজছে সব। বাইরে রাখা বাইক, গাড়ি সব ভিজছে।
কৃষ্ণচূড়ার গাছের উপর মেঘ নামছে
যেন সেও এসেছে কার এক খোঁজে
মেয়ের খোঁজে?
এই মেঘ তোর নাম্বার আছে?
তোর ইন্টারনেটের লাইন আছে?
ওতে নাকি লোকজন যায় দেখা
থাকুক না সে লক্ষ যোজন দূরে,
অসম্ভব না, তারও নাগাল পাওয়া
মেঘ হাসলো চকিত বিদ্যুতে
নিষ্ঠুর, নিষ্ঠুর, নিষ্ঠুর,
মাগো কি নিষ্ঠুর সে হাসি!
পরিচারিকা-মা ছিল যে, হঠাৎ হল নারী
বুকের ভিতর মুচড়ে উঠল
তার সিঁথির যে ছিল লাল, তার মেঘের ওপারে বাড়ি
এই মেঘ তার নাম্বার দে না
এই মেঘ তার নাম্বার দে
এই মেঘ তাকে বল না গিয়ে
দাঁড়িয়ে আছি এনকুয়ারিতে শিয়ালদাতে গিয়ে
এই মেঘ তাকে ডাক দে না রে,
এই মেঘ শোন লক্ষীটি, আয় না নিয়ে একবার তাকে ডেকে
তারও চুলে পাক ধরেছে?
আজও তেমন বায়না করে
খাবার পাতে কাঁচা নুনের
বর্ষা ভেজা রাত-দুপুরে
বাউল গানের আখড়া জেগে
গাঁজায়-মদে মাতাল হয়ে
বেসুরো গানে জ্বালিয়ে মারে?
দিদি স্টেশান
পার্সটা খোলে। চিরকুট বলে, মা।
সে স্নিগ্ধ হেসে বলে, আসছিরে সোনা।
মেঘকে বলে, আসি, তাকায় আড়চোখে
দীর্ঘশ্বাসে নারীটাকে বুকে চেপে।