Skip to main content

 

001.jpg

 

যে নদীটা আমাদের গ্রামের উপর দিয়ে যায়, তার অনেক কাজ। তার বয়ে চলার অনেক মানে। তার পাড় ঘেঁষে আমাদের শিব মন্দির। সে নদীতে মাছ ধরতে যায়, খগেন, নরেশ, বিলে, আফজাল, আবদুল। সে নদীতে বাসন মাজতে কাপড় কাচতে যায় আমাদের গ্রামের কত মা, বোনেরা, দিদিরা, ঠাকুমারা। সে নদীর এপার ওপার করে সংসার চালায় এ পারের জনার্দন আর ওপারের ফটিক। এই নদীর জল আমাদের পানের, স্নানের, পুজোর। ও হ্যাঁ, ওই নদীর পাড় ঘেঁষেই আমাদের শ্মশানঘাট।

আমাদের গ্রামের সামনে দিয়ে যে নদী যায় তার এরকম অনেক মানে। সেদিন এক পণ্ডিত এসেছিল গ্রামে। সে বলল, এ নদী নাকি কোন সুদূর পাহাড় থেকে বেরিয়ে, কোন সুদূরের সমুদ্রে গিয়ে মিশেছে। তার যাওয়ার পথের মাঝে নাকি কত জঙ্গল, কত জনমানবহীন মাঠ, ধূধূ বালি। আমি শুনি আর ভাবি, অতবড় নদীর কী মানে তবে? কাপড় কাচতে, বাসন মাজতে, নাইতে, খেতে তো অত বড় নদী লাগে না। তবে কী ওর আমাদের কাচাকাচি, স্নান, পারাপারের বাইরেও অনেক কাজ আছে? নাকি কোনো কাজই নেই? এমনিই সে যাচ্ছে তো যাচ্ছেই। কী এ যাওয়ার মানে? সবটাই কী তবে শুধু শুধুই? আমিই খালি মানে বানিয়েছি আমার মত করে? ওর কী কোনো দায় নেই আমার মানেগুলো বহন করে চলার?

একদিন রাতে, গোটা থালার মত চাঁদটা ভাসছে জলে। ধবধব করছে সাদা ধুতির মত। আমি পা ডুবিয়ে বসে জলে। এতবড় আকাশ, এমন দীর্ঘ নদী…. এসবের মানে কী ভেবেই যাচ্ছি, ভেবেই যাচ্ছি। হঠাৎ মনে হল, নাইবা থাকল অতবড় নদীর কোনো মানে। আমার এই একখণ্ড নদী, এখানে কাল হবে বাইচ প্রতিযোগিতা। কী আনন্দ হবে। আমার এ নদীর নাম রাখলাম, আনন্দ। এ আকাশের নাম রাখলাম, আনন্দ। যে আকাশে আমাদের পায়রাগুলো ওড়ে, জামাকাপড়গুলো যে আকাশের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে শুকায়। তার মানে শুধুই আনন্দ।

এই ভেবে নদীর দিকে তাকালাম। মনে হল সে যেন খুশি। সত্যিই কি খুশি? নাকি এও আমারই দেওয়া নাম, আমারই তৈরি মানের মত।