দুজন মানুষ কথা বলছে। কী আশ্চর্য একটা ব্যাপার না? বক্তৃতা না, ভাষণ না, হামবড়াই না, প্রিচিং না, ব্রেন-ওয়াশিং না, পরনিন্দা-পরচর্চা না। তবে? দুজন মানুষ নিজেদের গোটা জীবনের ছোটো-ছোটো সুখ দুঃখের কথা বলছে। কত কত ঘটনা। কত কত কথা। জগত ভুলেছে। সংসার ভুলেছে। আর ভুলবেই না কেন, সে সব তুচ্ছ বাইরের ব্যস্ত সংসারের কাছে।
কিন্তু দুজন মানুষের মস্তিষ্কের কয়েকটা নিউরোন কিছু দৃশ্য, কিছু অনুভব ভোলেনি। সেগুলো টুকরো টুকরো ভাষায় এই মহাকালের গর্ভে ক্ষণকালের জন্য জন্মাচ্ছে। বাতাসে ভাসছে। একজনের নিউরোনের জাল পেরিয়ে আরেকজনের নিউরোনের জালে যাচ্ছে। একটা সুখ জন্মাচ্ছে। এ সুখ শুধু মানুষের। না পশুর, না দেবতার।
এ সুখের ভাগীদার হতে গেলে অতি সাধারণ একজন মানুষ হতে হয়। একটা অতি সাধারণ জীবন কিছু সুখ, কিছু দুঃখের আলোছায়ায় রাস্তা দিয়ে নিয়ে যায়। একজন সাধারণ মানুষ আরেকজন সাধারণ মানুষের দৈবাৎ সঙ্গ পায়। তারা একটু নির্জনতা খোঁজে। একটু অবকাশ খোঁজে। বাইরের দৌড়াদৌড়ির সংসারের দিকের জানলাটা আলতো করে ভেজিয়ে দেয়। তারপর তারা কথা বলে। যে কথাগুলো বাণী না। যে জীবন কোনো আদর্শকে বাস্তবায়িত করার জন্য ব্যয়িত না। যে জীবন সামান্য কটা সুখদুঃখের স্মৃতিতে ভরপুর। যার বাইরের সংসারে কারুর কাছে কোনো মূল্য নেই, কিন্তু সুহৃদের কাছে আছে পরম মূল্য । যে ভাষায় এমন দুজন মানুষ কথা বলে সে ভাষা দুর্লভ। সে ভাষা দেবতার ঈর্ষার বস্তু। উচ্চাকাঙ্খীর অবোধ্য। লোভীর নাগালের বাইরে। সে ভাষা মাটির মত আদিম অকৃত্রিম। সে ভাষার শান্তির জলের মত। সে ভাষা সারাদিনের শ্রান্তির শেষে ঘুমের ওমে তলিয়ে যাওয়ার মত। সেকি চাইলেই পাওয়া যায়? উঁহু! ওই যে বললাম, বড় দুর্লভ সে জিনিস।
[ছবিটা তুলেছে Debasish Bose]