Skip to main content

 

বুদ্ধি সচল থাকলে প্রশ্ন আসবে, সংশয় আসবে। কিন্তু সংশয় প্রকাশ করলেই যে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় হচ্ছে এটা ঠিক না। আমি যদি কথায় কথা “কিন্তু কিন্তু” করি তবে মুশকিল। সুক্ষ্ম বিচার করছি ভেবে দেখা যাবে বহু জায়গাতেই আমি আত্মপ্রতারণাতে ডুবে যাচ্ছি।

আত্মপ্রতারণার একটা বড় শব্দ “কিন্তু”। আমার নানাবিধ ভয় আছে। বস্তুজগতের ভয়, মনোজগতের ভয়। বস্তু হারানোর ভয়, নিজের অথেন্টিসিটি হারানোর ভয়, নিজের অথোরিটি হারানোর ভয়। এরকম নানা ভয় আছে। আর এ সব ভয়েরই একটা বৌদ্ধিক প্রকাশ আছে - কিন্তু। কিন্তু শব্দটার পর এমন সব যুক্তি আসবে সেগুলো যেন ভীষণ ভ্যালিড। কিন্তু আদতে তা নয়।

যে কিন্তু সাচ্চা সংশয়ের তার জোর আছে। যে কিন্তু ভয়ের তার বাক্যের আস্ফালন আছে। ভাষা বোধের ইঙ্গিত। বোধকে সম্পূর্ণভাবে ভাষায় ধারণ করা সম্ভব নয়। তাই ভাষা সব সময়েই অসম্পূর্ণ। সে ইঙ্গিত করে। যার বোধ যতটা প্রসারিত সে সেই ইঙ্গিত থেকে সত্যটাকে ততটা বুঝে নেয়। ভাষা দুই বোধের মধ্যে একটা দুর্বল সেতুমাত্র। কিন্তু আপাতত ওই দিয়েই আমাদের কাজ চালিয়ে নিতে হয়। আমরা বডি-ল্যাঙ্গুয়েজ পর্যবেক্ষণ করে, চোখের দিকে তাকিয়ে, বাচনভঙ্গি থেকে কথিত ভাষার থেকে কিছু অতিরিক্ত সত্য আরো পাওয়ার চেষ্টা করি বটে সজ্ঞানে বা অজ্ঞানে, কিন্তু সেও খুব একটা ত্রুটিমুক্ত উপায় নয়। সে সবেরও একটা স্পষ্ট সীমাবদ্ধতা আছে।

‘কিন্তু’র দোসর হল ‘যদি’। ‘কিন্তু’ সাধারণত নিবৃত্তিবাচক। ‘যদি’ সাধারণত প্রবৃত্তিবাচক। কিন্তু বলে, কিন্তু নাও তো হতে পারে। যদি বলে, যদি হয়। ব্যস, মাথার মধ্যে ‘কিন্তু’’ আর ‘যদি’ মুখোমুখি বসে বকবকানি শুরু করে দিল। এদিকে আমার অবস্থা কাহিল।

‘কিন্তু’ আর ‘যদি’ এমনিতে মানুষ খারাপ না। তারা যখন ভয়জাত হয় তখনই সমস্যার। কারণ অকপট যুক্তিজাত ‘কিন্তু’ আর ‘যদি’ একটা কাণ্ডজ্ঞান যুক্ত রফায় আসে। জীবন এগোয়। আর ভয়জাত ‘'কিন্তু’’ আর ‘'যদি” নিজেদেরকে ঢাল করে রাখে। জীবন একটাই ঘূর্ণিতেই ঘুরঘুর করে মরে। ব্যাডমিন্টন খেলার মত। “কিন্তু’’ মেরে ‘'যদি’র কোর্টে পাঠায়। আবার “যদি’ মেরে ‘'কিন্তু’'র কোর্টে পাঠায়। রফা আর হয় না।

ভয় সহস্রনাগ। তার ছলচাতুরীর অভাব হয় না। সে সব সময়েই কপট। ভয় যদি অকপট হতে চায় তবে তার অস্তিত্ব থাকে না। ভয় সব সময়েই গোপনচারী। যদি কারোর ভয়কে জেনেছি বলে জানি, তবে সে ভয় নেই আর, সে তখন একটা জ্ঞান। আমার মাকড়সায় ভয় আছে, কী ভূতে ভয় আছে, কী ডেন্টিস্টে ভয় আছে - এ সব যদি স্পষ্টভাবে বলতে পারছি, তবে সেটা আমার জ্ঞানের মধ্যে তখন। ভয় হিসাবে ততটা নেই সে তখন আর আমার ইমোশনের জগতে। সে তখন একটা ভৌগোলিক মানচিত্র এঁকে গেছে আমার বৌদ্ধিক জগতে। আমি তাকে চিনি। সে আমাকে আর কন্ট্রোল করে না তখন। যদিও সে আমাকে স্বস্তিও দেয় না, কিন্তু সেটা আলাদা কথা।

ভয়হীন মানুষ হয় না। কিন্তু ভয়সর্বস্ব মানুষও তো হয় না। অন্তত হতে নেই। ভয়কে জড়িয়ে ভীতু হব, না নিজের ভয়কে নিজে জেনে আরেকটু বেশি আত্মজ্ঞানী হব, সেটা আমার সিদ্ধান্ত। তার আগে ওর ওই দুই ছদ্মবেশ ধরে টান দিতে হবে। ‘কিন্তু’ আর ‘যদি’। দুই শাগরেদ। ওদের সরাতে হবে। তবে রাস্তা পরিষ্কার হবে। কোনটা কপট আর কোনটা অকপট, চেনা যাবে।