সব আগে থেকেই স্থির। এই আকাশের রঙ, এই সমুদ্রের ঢেউ, এই জঙ্গলের মর্মর ধ্বনি… এই রক্তের রঙ… এই চোখের জলের স্বাদ… সব সব সব স্থির…..
আমি নিজেও স্থির…. আমার স্বভাবে…. দেশে কালে… আমার দেহের রঙে… রক্তের শ্রেণীতে… তবু আমি যেন আমাতেই শেষ নই…. আমার একদিকে পাঁচিল…. আরেকদিকে ধোঁয়াশা…. ওদিকে কি?
সব স্থির, সব নির্দিষ্ট, সব পূর্ব নির্ধারিত…. তবু….
এই যে তবু….. এই ইচ্ছা…. আমার ইচ্ছা…. বাসনা না…. ইচ্ছা…. আমার ইচ্ছা রঙের…. আমার ইচ্ছা সুরের…. আমার ইচ্ছা সুখদুঃখ কচুরিপানার মত সরিয়ে ডুব দিতে…. কি আছে গভীরে…. জানতে…..
আমার ইচ্ছার গভীরে কে? ইচ্ছার লাটাইতে কত রঙের সুতো…. যদি লাটাই ফেলে যাই…. সব ইচ্ছা মাড়িয়ে যাই… হই উদাসীন….. বলি এই লাটাইতে আমার আর সুখ নেই…. ঘুড়ি হারিয়ে যাক…. আমি দিলাম এই সুতো ছেড়ে…… আমি উদাসীন…..
উদাস বাতাস…. উদাস আকাশ… উদাস মাটি….. এও কি ছিল পূর্ব নির্ধারিত?
উদাসীন মহাকালকে জিজ্ঞাসা করলাম, এত সব সৃষ্টি কেন তবে? কোনো কিছুরই তো চরম শেষে কোনো অর্থ নেই….. এই জন্মমৃত্যু… শোকদুঃখ… উচ্ছ্বাস আমোদ… সব শেষে কি আছে? তুমিই তো….. পরম উদাস….
বাঁশি বেজে উঠল। চমকে উঠে বললাম, আমার অর্থ চাই না…. এ সুর আমার জন্মান্তরের চেনা…. এ সুরের উৎস বলো আমায়….
বাঁশির উৎস খুঁজতে খুঁজতে.. পেলাম…. আমারই বুকের ভিতর… ইচ্ছার ঘরের লাগোয়া তার ঘর…. আমি জানি না কি নামে ডাকব। কিন্তু সে প্রাচীন চেনা স্বরে ডেকে বলল, খেলবে?
জিজ্ঞাসা করলাম, ইচ্ছা মানে কি খেলা তবে?
বাঁশি বলল, ইচ্ছার খেলায় জগত….. খেলার ইচ্ছায় উৎসব….. খেলবে?
নেবে খেলায়?
এসো…. যদি সব ভয় রাখো দূরে….
যাবে ভয়?
কাউকে হারাতে চেও না…. নিজেকে জেতাতে চেও না….. এ যুদ্ধ নয়, জুয়াও নয়.... খেলবে খেলার আনন্দেই...… তবেই এ খেলা….. আসবে?