আছেন?
দরজায় ধাক্কা।
বৃদ্ধা বিছানায় শুয়ে ভাবলেন স্বপ্ন দেখছেন। আবার ধাক্কা,.... শুনছেন... আছেন কেউ?
উঠলেন। এলোমেলো শাড়িটা ঠিক করলেন। দরজার কাছে গেলেন। আলোটা কেটে গেছে। তবু পঞ্চান্নটা বছর এ পথে যাতায়াত, আলো কি লাগে?
দরজাটা খুললেন। একজন তরুণ, আর এক তরুণী।
তারা ইতস্তত চোখে তার দিকে তাকিয়ে।
বৃদ্ধা বললেন, কী বলো?
তরুণী বলল, আমি কি একবার ভিতরে আসতে পারি? বিপদে পড়েছি.....
বৃদ্ধা বুঝলেন। বললেন, ভিতরে এসো।
তরুণ দাঁড়িয়ে অন্ধকার বারান্দায়। বৃদ্ধা তরুণীকে নিয়ে ভেতরের ঘরে গেলেন। একটু পর বাইরে এসে বললেন, সাইকেল চালাতে পারো?
তরুণ বলল, পারি।
বৃদ্ধা বললেন, সাইকেলটা নিয়ে, সামনের এই পুকুরটাকে বাঁদিকে রেখে সোজা চলে যাও। একটা বড় মোড় পড়বে। ওখানে গিয়ে জিজ্ঞাসা করবে মনোরমা ওষুধের দোকান কোনদিকে। যাও। নিয়ে এসো।
তরুণ সাইকেলটা নিয়ে চলে গেল। সাইকেলটা বৃদ্ধার বাড়ির ভাড়াটিয়া ছেলেটার। নেই। পুজোয় বাড়ি গেছে।
তরুণ এলো খানিকবাদে। খবরের কাগজে মোড়া প্যাকেটটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে। সংকোচে।
বৃদ্ধা বললেন, আমার হাতে দাও। ও টয়লেটে গেছে।
তরুণী বেরিয়ে এলো। লাল একটা সালোয়ারকামিজ পরে। বৃদ্ধা বললেন, আমার মেয়ের। এবারে পুজোয় আসতে পারেনি। বোসো।
তরুণ বলল, আপনাকে আর বিব্রত করব না। আসি আজ। আমি কালই এসে দিয়ে যাব এটা। মানে জামাটা।
তরুণী বলল, না মাসিমা, কাল কী করে হবে? আমি সামনের শনিবার আসব। দিয়ে যাব।
বৃদ্ধা হাসলেন। বললেন, বোসো এখন। একটাও মিষ্টি নেই বাড়িতে। কেউ আসে না। তাই আনাও হয় না। আমি আনি।
তরুণ বলল, আমি যাই?
বৃদ্ধা বললেন, এ দায়িত্বটা আমার।
বৃদ্ধা চলে গেলেন। তরুণ আর তরুণী বসে শোয়ার ঘরে। খাটে। ছোটো একটা ঘর। দেওয়ালে অনেক ছবি। বাবা মা। শ্বশুর শাশুড়ি। স্বামী। পঞ্চান্ন বছরের পেরিয়ে আসা পথে দুজন আগন্তুক যেন। উৎসুক হয়ে চারদিকে তাকিয়ে কী যেন খুঁজছে।
তরুণী বলল, এ মাসে এত তাড়াতাড়ি হওয়ার কথা ছিল না.....
তরুণ তার কথা থামিয়ে তার ঠোঁটদুটোর উপর নিজের ঠোঁট দুটো বসিয়ে দিল। পঞ্চান্ন বছরের আসবাবে বেজে উঠল সানাইয়ের সুর।
বাইরের দরজাটা খোলার আওয়াজ হল।
তরুণ তরুণী উঠে গিয়ে বৃদ্ধার পা ছুঁল। নীচু হয়ে। বলল, শুভ বিজয়া মাসিমা।
বৃদ্ধা বললেন, শুভ বিজয়া। বোসো। আমি মিষ্টি আনি। চা খাও তো?