ছানা অতি উপাদেয় জিনিস। ছানা দিয়ে কতরকম মিষ্টি, সুস্বাদু পুষ্টিকর খাবারও তো হয়। কিন্তু সেই ছানাতেই যদি বিষ মিশে যায় তবে তা আর উপাদেয় থাকে কি? আমরা প্রায়ই পড়ি খবরের কাগজে খাদ্যে বিষক্রিয়ায় এতজন মারা গেছে। তারা কেউ-ই অখাদ্য খায়নি, সুস্বাদু খাবারই খেয়েছিল। জানত না ওতে বিষ আছে।
আপনার আমার ধর্মে যতই উচ্চতত্ত্ব থাকুক, উদারনীতি থাকুক, তা যদি ভেদবুদ্ধিতে এসে পর্যবসিত হয় তবে তা বিষ। ভেদবুদ্ধি মানে শুধুই বর্ণাশ্রমজনিত না, যা নিয়ে গুরুচাঁদ-হরিচাঁদ থেকে শুরু করে আম্বেদকর অবধি সবার লড়াই ছিল। সে তো আছেই। ইদানীং “ধড়ক ২” বলে যে সিনেমাটা নেটফ্লিক্সে দেখাচ্ছে সেটাও একই বিষয়ের উপর। মানুষের গায়ে যে পেচ্ছাপ করা যায় সেটা খবরের কাগজ না পড়লে জানা যায় না। অনেকেই আমার এই ধরণের এই পোস্টে আগে লিখেছেন, আজকাল এইসব হয়? অর্থাৎ দেশটাকে এখনও জানি না। নিজের অজ্ঞানতার স্বর্গে সুখে আছি।
ভেদবুদ্ধি শুধু বর্ণাশ্রম নিয়ে না। আমাদের ঐতিহ্য, প্রথার নামে যা যা চালানো হয় সে সবই ভেদবুদ্ধি। আপাত দৃষ্টিতে নিরীহ মনে হয়। তুমি বিধবা বলে পুজোর এই এই কাজে আসবে না। উনি গেরুয়া পরে আছেন বলে তোমার ছোঁয়া ওর অশুচি। তুমি মাসিকচক্রের মধ্যে আছ বলে তুমি এসো না মন্দিরে, অশুচি কোরো না। এও ভেদবুদ্ধি। এর মধ্যে যদি কোনো বিজ্ঞান থাকে সেটা অপবিজ্ঞান। এর মধ্যে যদি কোনো প্রথার ঐতিহ্য তবে থাকে তবে তা অমানবিক, সংকীর্ণ।
শুভ বিজয়ায় এই প্রার্থনা, মা, আমাদের সমাজ সব ধরণের ভেদবুদ্ধি সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠুক। ধর্মীয়, অধর্মীয়, সেকুলার যাবতীয় যা কিছু মানুষে মানুষে ভেদ টানে তা দূর হোক।
অনেকে বলেন প্রকৃতিতেই তো এত পার্থক্য। মানুষে হবে না? আলবাত হবে। কিন্তু আপনি বৈচিত্র্যকে ভেদবুদ্ধির সঙ্গে গুলিয়ে ফেলছেন। আমাকেও গুলিয়ে দিতে চাইছেন।
মানু্ষকে অশুচি মনে করা একটা ব্যাধি। মানুষ অসুস্থ হতে পারে, কিছুদিনের জন্য কোয়ারান্টাইনেও যেতে পারে। সে অভিজ্ঞতাও আছে আমাদের। তাতে লজ্জার কিছু নেই। অপমান নেই। কিন্তু অপমানের কোয়ারান্টাইন অপরাধ। মহত্ব, উদারতা সাধনার জিনিস। সম্প্রদায় ও সাম্প্রদায়িকতা উত্তরাধিকারে পাওয়া জিনিস। উত্তরাধিকারে সব সময় ঠিক জিনিসই পাওয়া যায় কে বলল?