Skip to main content
 
     দক্ষিণ কলকাতার একটা নামী শপিং মল। দুপুরবেলা। কান্তাচার্য্য তাঁর গিন্নীকে নিয়ে এসেছেন আগেভাগে পূজোর কেনাকাটা সেরে ফেলতে। ভুল বললাম, গিন্নী অর্থাৎ কিনা তারাসুন্দরী দেবী কান্তবাবুকে নিয়ে এসেছেন। সে যাই হোক। তারা দেবী এ দোকান সে দোকান ঘোরেন, পিছনে পিছনে ব্যাগের বস্তা নিয়ে কান্তবাবু। কিছুক্ষণ ঘোরার পর তিনি বললেন, "গিন্নী আর যে পারছি না। বরং আমি একটু জিরোই এখানে বসে। তোমার এই তলার কাজ হয়ে গেলে আমায় বোলো।" বলেই কান্তবাবু আর অনুমতির অপেক্ষা না করেই বসে পড়লেন। গিন্নী উপায়ান্তর না দেখে "আচ্ছা" বলে, সামনের দোকানে ঢুকে পড়লেন। 
 
     কান্তবাবু বসে বসে দোকান দেখছেন, লোক দেখছেন। সবাই কি খুশি। কি উৎসাহ। তাঁর নিজের মনটাও বেশ লাগছিল। হঠাৎ বলা নেই কওয়া নেই, মনটা কেমন দমে গেল। সব কিছু নিরর্থক মনে হতে লাগল। এ কি হল? কেমন হল? এরকম কেন হয় তাঁর? 
     "একে বৈরাগ্য বলে।" 
     তিনি চমকে উঠে পাশে তাকিয়ে দেখেন, পাশে এক সৌম্যকান্ত যুবক। বেশভূষা তো সেই সত্যযুগের মনে হচ্ছে। 
     কান্তবাবুর একই সাথে শ্রদ্ধা আবার ভয়ও হল। 
     শুকনো গলায় জানতে চাইলেন, "কে আপনি, আর এখানে এ বেশে কেন?" 
     "সে কি খুব জরুরী প্রশ্ন বৎস? আমি এ পথে যাচ্ছিলাম। তোমার প্রশ্ন শুনে দাঁড়িয়ে গেলাম।" 
     "কিন্তু আমি তো উচ্চারণ করিনি!" 
     "আমি অনুচ্চারিত প্রশ্ন বেশি শুনতে পাই যে কান্ত। আর আমি যখন খুশি যেখানে খুশি যেতে পারি। সে প্রসঙ্গ থাক। তোমার মনের যে দশা একে বৈরাগ্যের প্রথম ধাপ বলে।"
কান্তবাবু কিছুটা ধাতস্থ এখন। বললেন, "প্রথম কেন?"
     "কারণ পুরোটা হয় নি যে। বাইরের থেকে ভিতরে ঠেলাটাকে বলে কাঁচা বৈরাগ্য। এর পরের ধাপ হল ভিতরের দিকে টান। তাকে বলে অনুরাগ। তখন হল পাকা বৈরাগ্য।"
     "বুঝলাম, কিন্তু কিসের টান?"
     "বাইরে শূন্য মনে হলে ভেতরটাকে পূর্ণ করে পাওয়ার যে টান।"
     "সে পূর্ণ হতে কি করতে হয়?"
     সৌম্যকান্ত পুরূষ হো হো করে হেসে উঠলেন। কান্তবাবু চমকে তাকালেন কেউ দেখল কি না। না, কেউ খেয়াল করে নি। কি রক্ষে!
     "পূর্ণ হতে হয় না কান্ত। পূর্ণকে অনুভব করতে হয়। পূর্ণ তো হয়েই আছো। জানতে পারো না।"
     "কেন জানতে পারি না?"
     "সেই কান্নাটা জমে ওঠেনি বলে"
     "কান্না?"
     "হ্যাঁ কান্ত। হারিয়ে কান্না না। সব পাওয়ার পরের কান্না।"
     "পাওয়ার পরে! তখন তো মানুষের উচ্ছাসের সময়!"
     "আবার তখনি কারোর কারোর কান্নার সময় কান্ত। তারা ভাগ্যবান। নয় তো তোমার কিসের অভাব কান্ত?"
     তাই তো! তার তো কিছুর অভাব নেই!
     পাশে তাকিয়ে বলতে যাবেন, "তাই তো", দেখেন তিনি নেই!
     কান্তবাবু হতচকিত। আরে নামটা যে জানা হল না!
     তারাসুন্দরী এসে পড়লেন, উচ্ছ্বসিত। "হ্যাঁ গো সেই বাচ্চাটা কোথায় গেল?"
     কান্তবাবুর আবার অবাক হওয়ার পালা, "কোন বাচ্চা?"
     "আরে এই যে দেখে গেলুম একটা ছেলের সাথে কথা বলছ। মুখটা কি সুন্দর গো! যেন শুকদেবটি।"
     কান্তবাবু হাঁ করে গিন্নীর দিকে চেয়ে রইলেন। কানে বাজতে লাগল... যেন শুকদেবটি... শুকদেবটি...
     তাঁর কান্না পেল। পাওয়ার না হারাবার? কে জানে?