Skip to main content

    স্বপ্ন দেখেন?

    দেখি। 

    কি দেখেন?

    এই ধরুন গলায় দড়ি দিচ্ছি। সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরতে গেছি বাঘে খেয়ে নিচ্ছে। সমুদ্রে নুলিয়া আমায় ডুবিয়ে দিচ্ছে। গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে মারা যাচ্ছি। চব্বিশতলা ছাদ থেকে ঝাঁপ দিচ্ছি। 

    ভয় পান?

    পাই, আবার পাইও না। 

    ভালো কিছু দেখেন না?

    দেখি, যেমন রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে টোটো চালাচ্ছেন। সুভাষ বোস প্লেন ক্র‍্যাশের রিপোর্ট নিয়ে কোর্টে দৌড়াদৌড়ি করছেন।

    আপনি ডিপ্রেশনে ভুগছেন। 

    জানি। সেই জন্যেই তো আর বেঁচে থাকতে ইচ্ছা করল না। আপনার কেসটা কি?

    তেমন কিছু না। সিঁড়ি থেকে স্লিপ করে, আসলে পেটটা ভালো যাচ্ছিল না। তাড়াহুড়ো করে নামতে গিয়েই….

    অপঘাত… বুঝেছি… এই বাড়িটার খোঁজ পেলেন কি করে?

    এই সামনের দোকানে চা খেতে আসতাম তো…. তখনই শুনেছিলাম এই বাড়িটা নিয়ে নাকি কি সব কেস চলছে….

    চলুন ঘুরে আসি….

    বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে যে…

    কিন্তু ভিজবে কে?

    তাও তো…. আসলে অভ্যাস হয়নি…

    হয়ে যাবে… 

 

*********

 

    গঙ্গা আমায় ভীষণ টানে... তাই গঙ্গাতেই…

    হুম বুঝেছি... লঞ্চ থেকে?

    না, ব্রীজ.. হাওড়া… হাওয়া লাগছে?

    না, মনে হচ্ছে যেন লাগতে পারে…

    অনুভবটা সুক্ষ্ম করতে না পারলে…

    আচ্ছা এই যেন চারদিকে একটা অদ্ভুত শূন্যতা... আপনি টের পান?…. সবাই আছে... সবাইকে দেখতে পাচ্ছি... সবার কথা শুনতেও পাচ্ছি… কিন্তু সব কিছুর মধ্যে আমি যেন বেখাপ্পা... কেন হয়?..

    এইটাই জীবন... মানে এই দিকের জীবন.. সবার মধ্যে থেকেও নিজেকে মনে হবে কখনও জোকার... কখনও হাওয়া.. কখনও খাটের বাটাম.. কখনও রান্নাঘরের সাঁড়াশি... কখনও পায়খানার মগ… কখনও…

    টকঝাল চানাচুর… দরজার হাতল… আমি একটু কাঁদব?

    আসুন, এই বটগাছটার তলায় বসে কাঁদুন। আমিও প্রথম প্রথম এখানেই... আহা... এত জোরে জোরে না…. ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে… আগে বুক ভরে শ্বাস নিন... এইবার… হ্যাঁ এই তো….

    
    (মিনিট দশেক পর)


    হালকা লাগছে? যান একটু গঙ্গায় নেমে আসুন…

 

*********

 

    ঘুমালেন? ও দিদি? ঘুমালেন?

    না না, এই একটু গান গাইছিলাম…

    আপনি কি গান শেখাতেন?

    না দিদি, আমি কলেজে পড়াতাম…. আপনি?

    আমি বরের সঙ্গে শুতাম আর রান্নাবান্না, কাচাকাচি, ঘরমোছা বাসনমাজা করতাম... ছেলেমেয়েদের বাঁচিয়ে রাখা….

    ওরা কি অসুস্থ?

    কি যে বলেন দিদি, সব শিশুই তো নির্ভরশীল.. মানেই তো অসুস্থ…. আমি বাঁচিয়ে রাখতাম... কর্তা মানুষ করতেন…

    কর্তা কি.. 

    সে কথা থাক দিদি। রেলে কাজ করতেন। এক চড়ে আমায় বৃন্দাবন, কাশী দেখিয়ে দিতেন। দাপট ছিল বটে… আপনি বোধহয় সংসার করেননি…

    না, তবে আমারও একজন মানুষ ছিল... সে…

    মরল না ছেড়ে গেল?

    ছেড়ে গেল... আলাদা সংসার পাতল….

    দিদি বাইরে এসো একবার.. তাড়াতাড়ি… কি দেখছ?

    ও তো বাচ্চা মেয়ে... আমরা কিছু করব না?

    তুমি ছাদে থেকে গাছের উপর লাফ দিতে পারবে? আমি একটা ডাকসাইটে চীৎকার করি…

    দাঁড়াও... দাঁড়াও…. মনে হয় ওরা ভালোবাসছে….

    আমাদের কি ওদের পাহারা দেওয়া উচিৎ?

    কেন?

    কুকুরদের থেকে বাঁচাবে না?

    আমাদের কে বাঁচিয়েছে দিদি?

    তাই তো বাঁচাতে হবে দিদি….
    
    তোমার মায়া কাটেনি…. কে জানে কাল ও-ই আমাদের দলে এসে ভিড়বে কিনা…. কত দেখলাম…. ভালোবাসা আর সম্পত্তির লোভ.. এই তো আমাদের দল ভারী করে দিদি…

    ওরা চলে গেল…

    যাক। তুমি কি গাইছিলে যেন?

    আর কতকাল থাকব বসে…. অতুলপ্রসাদের লেখা…. শুনেছ?

    না, গাও শুনি…

 

আর কতকাল থাকব ব’সে দুয়ার খুলে, বধূ আমার!

তোমার বিশ্বকাজে আমারে কি রইলে ভুলে, বধূ আমার।

বাহিরে উষ্ণ বায়ে মালা যে যায় শুকায়ে,

নয়নের জল, বুঝি তাও, বধূ মোর, যায় ফুরায়ে।

শুধু ডোরখানি হায় কোন পরাণে তোমার গলায় দিব তুলে, বধূ আমার।

হৃদয়ের শব্দ শুনে চমকি’ভাবি মনে,

ঐ বুঝি এল বধূ ধীরে মৃদুল চরণে;

পরাণে লাগলে ব্যথা ভাবি বুঝি আমায় ছুঁলে, বধূ আমার।

বিরহে দিন কাটিল, কত যে কথা ছিল,

কত যে মনের আশা মন-মাঝে রহিল;

কী ল’য়ে থাকব বলো তুমি যদি রইলে ভুলে, বধূ আমার।।

 

    আহা দিদি, আমার তো কারোর জন্যে অপেক্ষা নেই… তবু শুনে কাঁদছি... মানুষ কি ন্যাকা… না দিদি?

    ন্যাকা না দিদি... মানুষ দিব্যপশু….

    সেকি দিদিভাই?

    মানুষকে কাদার তালে বানিয়ে তার মধ্যে এক বিন্দু হীরে গেঁথে দিলেন জগদীশ্বর…. মানুষ এখন বোঝে না সে কাদা গলাবে না হীরে খুঁজে মরবে….

    তুমি কি করেছ দিদি?

    মানুষ দুই-ই করে দিদি... কাদা গলিয়ে গলিয়ে কাঁদে…. হীরে বুকে জড়িয়ে কাঁদে…. আলোয় দাঁড়ালে হীরের দ্যুতিতে প্রাণ কাঁদে... বলে ওই মহাসিন্ধুর ওপার থেকে কি সঙ্গীত ভেসে আসে…. আবার অন্ধকারে দাঁড়ালে কাদায় পা ডুবিয়ে কাঁদে…. আমি স্বখাত সলিলে ডুবে মরি শ্যামা….

    আমি তো কেঁদেই গেলাম দিদি কাদা জড়িয়ে…. হীরে তো পেলাম না…. হারিয়ে গেল দিদি তবে?

    না গো... হারাব বললেই কি হারানো যায়…. চলো চাঁদের আলোয় মাঠে ঘুরে আসি….

    তুমি কি গানটা আবার গাইবে?

    গাইব…. তোমায় অতুলপ্রসাদের গল্প বলব... সে মানুষও অপেক্ষা করেছিল….

    কার দিদি?

    নিজের স্ত্রী আর গোবিন্দের…

    পেয়েছিল?

    জানি না ভাই…. কে কাকে পায় কেউ জানে না দিদি... সবাই শুধু খোঁজে…. কাদায় পা ডুবিয়ে হীরের জ্যোতি…..

Category