Skip to main content

জীবনে বড় বড় দুঃখ, ছলনা, বিশ্বাসঘাতকতা ইত্যাদি সব সহ্য করে নেওয়া যায়। সে সব সহ্য করার জন্য কত সান্ত্বনাও পাওয়া যায় রেডিমেড। স্বজন-বন্ধুবান্ধবদের কাঁধে হাত, মহাপুরুষের বাণী, ধর্মে-দর্শনের আশ্বাস, আরো কত কত কি? যা হোক, সে সব দুঃখকষ্ট তবু খানিক হলেও হাসি মুখে সহ্য করে নিয়েছি। কিন্তু একটা জিনিস আমি কিছুতেই সইতে পারি না।

    কি সেটা?

    শুতে যাওয়ার আগে মশারির মধ্যে মায় একটা মশারও অবাঞ্ছিত উপস্থিতি।

    তবে এ তো প্রথম ধাপ। তারপরের ধাপ হল তাকে খুঁজে বার করা। বসে বসে তাকে খোঁজার চেষ্টা করছি। হাঁটু ঘষটে ঘষটে, হামা দিয়ে দিয়ে চপাট চপাট করে হাত চাপড় দিচ্ছি। বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে আমি যেন হাতে তালি দিয়ে দিয়ে হরিনাম করছি মশারির মধ্যে বসে বসে। কিন্তু আদতে তো তা নয়, আমি মুক্তির উপায় খুঁজছি। ভব বন্ধন থেকে নয় তো, মশকীর উৎপাত বন্ধন থেকে।

    কিন্তু সব বৃথা। যখন মনে হবে সেটি পুবদিকের কোণে বসে আছে, মারতে গিয়ে দেখলে সে পশ্চিম দিকে বসে। এই ভ্রমে গোল গোল মশারির মধ্যে ঘুরে মরছো। মা আমায় ঘুরাবি কত। মাঝে মাঝে সে আবার উধাও। আবার কানের কাছে। কি ঘাড়ের কাছে। কি হাতের পাতার উপর। শীতে তো আরো সমস্যা। পাখার আওয়াজ নেই। শব্দ বলতে তার ডানার অভিসারের ধ্বনি। আরে ভাই, এমন বলা নেই কওয়া নেই এক পরপুরুষের মশারির মধ্যে ঢুকবি কেন তুই? না হয় হলিই মশা!

    নিজেকে জিম করবেটের মত মনে হবে কিছুক্ষণের জন্য। প্রাণপণ খোঁজ এ কোণ, সে কোণ। কিন্তু থেকে থেকেই ওই ফসকে গেল! মানত করে ফেলছি, মা এইবার ধরিয়ে দে ওকে...কাল দুটো সন্দেশ দিয়ে পুজো দেব। দেখিয়ে দে মা.. দেখিয়ে দে... আমার চেতনা চৈতন্য করিস না করিস মা... মশকীর আয়ু এ অধমের হাতে নিপাত কর মা... কর।

    হয় তো তাও হল না। তখন আবার জিম করবেটের থিওরি। উনি কি করতেন? একটা ছাগল গাছের নীচে বেঁধে বাঘের অপেক্ষা করতেন না? এও তেমন। নিজেকে ছাগল, কি কচি পাঁঠা বা মোষের মত চুপচাপ শুইয়ে রাখো। অপেক্ষা করো তারা আসার। দেহের প্রতিটা অণু-পরমাণু সতর্ক। কই সে? ডান হাতের পাঁচটা আঙুল বন্দুকের নলের মত উন্মুখ। এলো কি? এলে নিজের শরীরের উপরেই সমস্ত বল প্রয়োগ করে, ইয়া!!

    জ্বলে গেল। হয় সে মরল। নইলে সে উড়ল।

    কেউ জানে না এ খেলা কতক্ষণে শেষ হবে। সবই ভাগ্য। কখনও দু মিনিটেই ম্যাচ শেষ। কখনও আধাঘন্টা, বা অনির্দিষ্টকালের জন্য। সবই ভাগ্য মা!

    জীবনে দুঃখ আছে। সহ্য হয় মা। কিন্তু মশারির মধ্যে মশা ঢোকাসনি। এ কৃপা কর।