আমরা কি বাইরের জীবনে হুল্লোড়জীবী (hedonist) আর ব্যক্তিগত জীবনে নৈরাশ্যজীবী (nihilist) হয়ে উঠছি দিনে দিনে?
আমরা কি বুঝে গেছি যে মহাবিশ্বে আমরা একা? কেউ দেখছে না আমাদের কার্যকলাপ। কোনো বিচারক ঈশ্বর, দরদী ঈশ্বর, কবি ঈশ্বর নেই। কোনো ন্যায়নীতি, সহমর্মিতা, অনুকম্পা নেই। সবটাই র্যাণ্ডম, অ্যাক্সিডেন্টাল। অপরিকল্পিত। আমাদের গল্পে কোনো আলোর জগতের নায়ক নেই আর। আমাদের গল্পের নায়করা এখন অন্ধকার জগতের।
এ নৈরাশ্যবাদের শিকড় গভীরে ছড়িয়েছে। উদ্বেগ, হতাশা, অপরাধপ্রবণতা, অধৈর্য, নেশাপ্রবণতা, অসামাজিক হয়ে পড়া, তুচ্ছ কারণে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেওয়া, রাগে উন্মত্ত হয়ে যাওয়া... ইত্যাদি ইত্যাদি সহজ হয়ে পড়েছে।
এই যে নৈরাশ্যবাদ গ্রাস করছে ধীরে ধীরে, তাকে বাইরে থেকে চেনা যাচ্ছে না। কারণ বাইরে একটা চরম পার্টি চলছে। যেন উৎসব। আসলে যা নয়। আসলে যা শুধুই হুল্লোড়, উত্তেজনা, ডিসর্ডার। মনে হচ্ছে যেন প্রবল কিছু একটা। কাছে এলে দেখা যাচ্ছে এ ছদ্ম উৎসবের মঞ্চের চারদিকে হাজার হাজার সুড়ঙ্গ। সে সুড়ঙ্গ দিয়ে ধীর গতিতে ঢুকছে নিরাশার চাপ চাপ অন্ধকার। হারিয়ে যাচ্ছে সার দিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রতি মুহূর্তে।
বিগত দিনের বিশ্বাস ফিরিয়ে আনা যাবে না আর। বিশ্বাস তৈরি করা যায় না। বিশ্বাসের ভঙ্গিটুকুর নকল তৈরি করা যায়। আসল বিশ্বাস তৈরি হয়। বিশ্বাস জন্মায় চিন্তার ধাঁধা কেটে গেলে। শান্ত চিত্তে। আবার চিত্ত শান্ত হয় বিশ্বাসে। এ এক খেলা। কিন্তু এ খেলা মানুষ আর খেলতে চাইছে না। পাহাড়ে, সমুদ্রে নিরিবিলিতে, একাকীত্বে শান্তি খুঁজতে যাচ্ছে সার দিয়ে মানুষ। সেখানে গিয়ে নতুন পরিবেশকে ভোগ করতে চাইছে। আর এই অস্থায়ী আকস্মিক পরিবেশ পরিবর্তনের জন্য মনে জন্মানো ক্ষণিক সুখের ঘোরকে বলছে শান্তি। কদিন থাকুক সেখানে। আবার সুড়ঙ্গ ফুঁড়ে বেরোবে নৈরাশ্যের ফণা। আবার ছোবল। আবার সব বিষণ্ণ। অর্থহীন। আবার হুল্লোড়ের জন্য হাহাকার। আবার সব ফুরিয়ে যাওয়া। আবার সব একরকম!
সুখ না, দুঃখ না, হতাশা না, আশা না, প্রেম না, অপ্রেম না.... কোনোরকম কোনো অতিচেষ্টা না। কোনোরকম কোনো চ্যালেঞ্জ না। আত্মোন্নতি না। আত্মজ্ঞান না। আত্মধিক্কার না। কিচ্ছু না। আমার কাছে আমার সব পরিচয়, সব সংজ্ঞা পেরিয়ে, আমারই আদিম গভীরে কি কোনো অনাহত ধ্বনি শুনতে পাচ্ছি? যে শুধু বলে চলেছে, আমি আছি.... আমি আছি.... আমি আছি। ব্যস এইটুকুই। এ কথার কোনো ব্যাখ্যা নেই। ভাষ্য নেই। অতীত নেই। ভবিষ্যৎ নেই। শুধু বর্তমান আছে। যার শুরুর আর শেষের একটাই সুর - আমি আছি। এই তো আছি। ব্যস এতটুকুই কথা যেন বলার ছিল। আছে। থাকবেও। বাদবাকি সব জঞ্জাল - দামী আর অদামী, এই যা!