Skip to main content
haza upakhyan

গুরুদেব দরজা খুলেই দেখেন শিষ্য বসে, দোরগোড়ায়। 

     গুরুদেব একরাশ বিরক্তি গীতার শ্লোক স্মরণে শান্ত করে বললেন, এত ভোরে বৎস?

     শিষ্য বলল, একটা হাজার মলম চাই গুরুদেব…

     গুরুদেব যারপরনাই বিরক্তি আবার উপনিষদের শ্লোকে চেপে বললেন, কেন বৎস? 

     আজ্ঞে গুরুদেব, ইষ্টের দক্ষিণ শ্রীচরণের বুড়ো আঙুল পাশেই একটা বড় হাজা হয়েছে…. উনি বারবার বলছেন আপনার কাছ থেকে একটা মলম চেয়ে আনতে…

     গুরুদেবের মাথাটা এমন চক্কর দিল তিনি নিজের উচ্চাসন ভুলে শিষ্যের পাশে বসে বললেন, সেকি! হাজা! কই আমার চোখে পড়েনি তো…

     শিষ্য কাঁচুমাচু মুখ করে বলল, আজ্ঞে উনিও বলছিলেন, আপনি আজকাল বড্ড অন্যমনস্ক থাকেন… নইলে এতবড় হাজা চোখে পড়ে না….

     গুরুদেবের চোখ ফেটে জল এলো... তিনি বললেন, সবই লীলা রে…. আচ্ছা দাঁড়া…, এই বলে গুরুদেব তার কানে কিছু বলে দিলেন….

     শিষ্যের মুখ উদ্ভাসিত হয়ে উঠল। সে তৎক্ষণাৎ বলল, যাই বউকে বলি গিয়ে...

     গুরুদেব হাঁ করে তাকিয়ে থাকলেন… বললেন, বউকে বলি মানে? 

     শিষ্য বলল, আসলে ও-ই তো দেখেছে গুরুদেব… বলল, কি গো তোমরা সারাদিন ডেকে ডেকে ওনার দিনরাত এক করে দিচ্ছো…আর এইটুকু জিনিস চোখে পড়ে না!.. কি যে লজ্জা পেলাম গুরুদেব.... আসলে আমার বউয়েরও পায়ে ওই তো..…. কাপড় দিয়ে ঘষে কি একটা মলম লাগায়… কিন্তু ওনার অত কোমল শরীরে কি সে ঘষা যায়... তাই… 

     গুরুদেব বললেন, তোমার স্ত্রী কি দীক্ষিত? 

     শিষ্য হেসে বলল, না গুরুদেব… সে মুখ্যু মেয়েমানুষ… নইলে জ্যোতিটোতি না দেখে কেউ ওসব হাজাটাজা দেখে!

     শিষ্য চলে গেল। 

     গুরুদেব বসে আছেন। উদাসীন। কোথায় কি যেন খটকা। কোনটা দেখা বেশি দরকার… জ্যোতি… না হাজা… কার সেবা করছেন তবে… নিজের না প্রভুর?....

     এমন সময় স্ত্রী এসে বলল, হ্যাঁ গো… একটা কথা ছিল… তোমায় এরকম বসে থাকতে তো দেখি না… তাই এখনই বলে রাখি… বিগ্রহের পায়ের কাছে কি সব হয়ে আছে...  একবার দেখে নাও না... মনে হয় আবার করে রঙ করতে হবে... যদু পালকে ডাকো… গড়ে দিয়ে যাক…

     গুরুদেব স্ত্রী'র মুখের দিকে তাকিয়ে। মাথায় চিন্তাগুলো ডিগবাজি খাচ্ছে। কি করলেন আজীবন! নিজের ঘোরে নিজেকে নিয়েই কাটিয়ে গেলেন… এই কি সাধনা!.. এতো স্বার্থপরতা!!  ছি ছি… 

  গুরুদেব উঠে দাঁড়ালেন। বউকে বললেন, আমি আসছি গিন্নী। 

   গিন্নী আঁতকে উঠে বলল, একি! আহ্নিক না করে তো কোথাও যাও না… তবে?

   গুরুদেব বললেন, বড় গুরুর খোঁজ পেয়েছি গিন্নী… একবার প্রণাম করে আসি… যিনি চোখ খুলে দেন তিনিই তো গুরু গিন্নী… কানে মন্ত্র ফুঁকতে তো সবাই পারে… কিন্তু চোখের ঠুলি খুলতে ক'জন আর পারে!

 

(ছবি Suman)