Skip to main content

সারা পৃথিবীতে একটা জায়গাতেই জাতি-ধর্ম-বর্ণ ইত্যাদির শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে তর্ক হয় না, সেখানে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে কেবলমাত্র মানুষের মঙ্গল নিয়েই এই নিয়ে আলোচনা, ব্যস্ততা - সে হল হাস্পাতাল।

    দু'জন শিক্ষিত ভদ্র মানুষ, অনুকূলচন্দ্রের কাছে গিয়ে অনুরোধ করছেন কৃপা করার জন্য। কিরকম কৃপা? না, তারা কুয়ো খুঁড়েছেন, কিন্তু জল আসছে না। তাই ইনি কৃপা করলেই জল এসে যাবে এই তাদের বিশ্বাস। 

    উনি বললেন, একজন ভালো ইঞ্জিনিয়ার দেখান। যে কাজ যে বিহিতে হয় সেই কাজ সেই বিহিতে করাই পরমপিতার দয়ার কাছে পৌঁছানো। 

    ডাক্তার জর্জ চ্যাণ্ডি, ভেলোরের বিশ্ববিখ্যাত হেপাটোলজিস্ট, দেখতাম চেম্বারে ঢোকার আগে হাত জোড় করে অনেকক্ষণ যীশুর যে ক্রস হাস্পাতালের কেন্দ্রে আছে, সেখানে বসেন। সেই চার্চে প্রতি মুহূর্তেই নানা মুমূর্ষু রুগী, তাদের আত্মীয়, চিকিৎসক, নার্সেরা আসছেন। নিঃশব্দে বসছেন। প্রার্থনা করছেন। উঠে যাচ্ছেন। তাই বলে ভেলোর হাস্পাতাল কি অলৌকিকত্বের আশায় চলছে? না, অত্যন্ত উন্নতমানের পরিষেবা, টেকনোলজি ইত্যাদিতেই চলছে। অর্থাৎ বিহিতকে অস্বীকার করে চলছে না। 

    সাধারণ বুদ্ধি কখনও মানুষে মানুষে বিরোধ টানে না। বিরোধ টানে স্বার্থলোভী বুদ্ধি। আজ যে ছবি প্রতিদিন দেখতে হচ্ছে, যে অসহায়তার রোজ সাক্ষী হচ্ছি, তাতে আমাদের অবদানও কম নয়। আমরা যে ভেবে নিয়েছিলাম আমরা অতিমারি অতিক্রম করে ফেলেছি, যখন সারা বিশ্ব দ্বিতীয়, তৃতীয় ঢেউএর আঘাতে উদ্বেল, সেটা আমাদের খেয়ালেই আসেনি। এটাকে অদৃষ্টবাদ বলে। আমরা তখন হিন্দু-মুসলমান খেলা খেলছি। যে দিল্লী আজ এই মর্মান্তিক দৃশ্যের সাক্ষী, সেই দিল্লীই ক'দিন আগে কি অমানবিক দাঙ্গায় মত্ত হয়ে উঠেছিল! সে ছবি এখনও ইউটিউব ইত্যাদিতে দুষ্প্রাপ্য নয়। এ অসহায়তা আসলে আমাদের প্রাপ্য। আমাদের চোখ-কান-মন অন্ধ হওয়ার জন্য ব্যকুল। কেউ একটা পট্টি নিয়ে এলেই হল। যে দেশ স্বাধীন হওয়ার এতগুলো বছর পরেও ধর্ম নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছে, সে দেশকে যে অন্যখাতে বওয়ানো কারোর পক্ষেই সম্ভব না, সেটুকু বুদ্ধি আমাদের ঘটে কুলালো না!

    যাই হোক। তাই বলছিলাম, আজকে এই শিক্ষাটাই সার হোক, ওই হাস্পাতালের মানসিকতাটাই সার হোক, যেখানে মানুষের সৌখিন বিবাদ করার অবকাশ থাকে না। সেখানে জীবনের প্রাথমিক শর্তটাই বিপন্ন। শ্বাস শুধু শুদ্ধ বাতাসেই নয়, শ্বাস শুদ্ধ মানসিক পরিবেশেও। যেখানে বৈচিত্র মানে বিপন্নতা না, বৈচিত্র মানে জীবনের বিহিত, ছন্দ। তাকে অস্বীকার করা মানে জীবনকে অস্বীকার করে।