গুরুদেব দেহত্যাগ করবেন
সজ্ঞানে। দেশ বিদেশ থেকে লক্ষ লক্ষ শিষ্যশিষ্যারা এসে গেছে। দেশ বিদেশের টিভি
চ্যানেলে লাইভ টেলিকাস্ট হবে। গুরুদেবের দেহত্যাগের ধরণটা একটু অভিনব। তিনি
রেললাইনে গলা দিয়ে শোবেন। ট্রেনের আলো দেখা গেলেই ভক্তেরা নামসঙ্কীর্তন শুরু
করবেন। ব্যস, সজ্ঞানে গুরুদেব দেহত্যাগ করবেন। কেন?
কারণ তিনিও তাঁর রক্তে জগতকে পাপমুক্ত করে যাবেন, মেরীপূত্রের মত। সব অবতারের একটা এক্সপায়ারি ডেট থাকে। এবার তাঁর পালা,
সেটা তিনি জগতকে বোঝাতে চান।
প্রশ্ন হতে
পারে, কিন্তু এতো আত্মহত্যা। সে তো পাপ!
এখানে গুরু
উত্তর দিয়ে গেছেন, দেহ আর আত্মা আলাদা বোধ হয়ে গেলে তখন আর
আত্মহত্যায় পাপ নেই।
যা হোক।
কিছু কিছু শিষ্যও গুরুদেবের সঙ্গে মর্ত্যলোক ছাড়বেন বলে জেদ ধরেছেন। তাদের
আত্মবোধের পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে একদিকে। পাশ করলে তবেই গুরুসঙ্গে পরলোক যাত্রার পাস
দেওয়া হবে।
এদিকে
গুরুদেবের এক বৈজ্ঞানিক শিষ্য অমৃতলোক যাওয়ার লাইভ ভিডিও দেখাবে বলে কি এক অদ্ভুত
ক্যামেরা নিয়ে এসেছে। সে ক্যামেরায় নাকি আত্মার তরঙ্গদৈর্ঘ্যে ধরা পড়ে। সরু নীল
আলোর মত সে ঊর্ধলোকে উঠে যায়, দেখা যায়। শুদ্ধ আত্মার ধীরগতি।
পাপী আত্মার ডিগবাজি গতি। এ নাকি অনেক গবেষণার ফলে সে শিষ্য গুরুকৃপায় জেনেছে।
গুরুদেব
লাইনে শুলেন। ক্লাইম্যাক্স রেডি। কিন্তু ট্রেন আর আসে না। স্টেশান এখান থেকে বেশ
দূর। ফোন ধরছে না কেউ স্টেশানে। এদিকে গুরুদেব অধৈর্য হচ্ছেন। অমৃতযোগ মিস হয়ে
গেলে বারো বছরের জন্য এ লীলাখেলা সম্ভব হবে না আর। তখন?
স্টেশানে
লোক গেল। তারা খোঁজ নিয়ে জানল যে আগের স্টেশানে আরেকজন গুরুদেব লাইনে শুয়ে আছেন।
তিনি আবার ঘোষণা করেছেন, যে ট্রেন তার উপর দিয়ে যাবে সেই ট্রেনের সব
যাত্রীদের শুধু না, সেই সব যাত্রীদের আত্মীয়দের অবধি মুক্তি
দিয়ে দেবেন ও অমৃতলোকে নিয়ে যাবেন সঙ্গে সঙ্গে। ব্যস, শুরু
হয়ে গেছে ঝামেলা। সে ট্রেনের চালক কিছুতেই মুক্তি নেবে না। তার অনেক শখ, সদ্য বাড়ির প্ল্যান স্যাংশান হয়েছে, এর মধ্যে গেলে
কি হয়? ট্রেনের বেশিরভাগ যাত্রীদেরই তাই মত। সবারই এই
মর্ত্যলোকে নানা প্ল্যান আছে। সে সব ছেড়ে কি অমন ফস করে অমৃতলোকে যাওয়া যায়?
অগত্যা
ট্রেন আটকে। সমস্যার সমাধান খুঁজতে রেলবোর্ডে মিটিং বসেছে। তর্ক উঠেছে, কেউ যদি ইনস্ট্যান্ট মুক্তি না চায় তবে কুম্ভতে কারা যায়? তবে তো কুম্ভের জন্য স্পেশাল ট্রেন চালানো অপচয়!
বড় বড়
গুরুরাও বসেছেন সে আলোচনায়। শাস্ত্র থেকে হিউম্যান রাইটস, কি নিয়ে না আলোচনা হচ্ছে। একজন বললেন, মুক্তি মানে
পাপ, অজ্ঞানতা থেকে মুক্তি..দেহ থেকে নয়..
তখন আরেক
গুরু বললেন, কিন্তু, দেহই তো
পাপের মূল, তাই দেহ থেকে মুক্তিই সব পাপের মূল থেকে
মুক্তি...
ব্যস, তুমুল হট্টগোল বেধে গেল। কিন্তু হল কি, এই আলোচনা
শেষ হতে হতেই অমৃতযোগ পেরিয়ে গেল। দুই গুরু বিমর্ষমুখে আশ্রমে ফিরে গেলেন।
কিন্তু সে
হলে হবে কি, তাঁদের এই আত্মত্যাগ আর পরহিতের জন্য এমন
অভিনব আত্মবলিদান দিতে চাওয়ার আখ্যান নিয়ে বড় বড় পদ লেখা হল। সে পদ পড়লেই এই যুগে
মুক্তি। বাকি প্রাচীন অবতারদের ফুল প্যাকেজ এই গুরুদের মধ্যে। একজন প্রেমের পথে
নেন, আরেকজন জ্ঞানের পথে। সাত দিনের কোর্স, ব্যস, সব হাতের মুঠোয়। দু হপ্তাতেই সে পদাবলীর সপ্তম
এডিশান শেষ।
শুধু কেউ
জানল না, দুই গুরুর সেই আত্মবলিদান দিতে লাইনে শোয়ার আগের দিন রাতে দুই
শহরের বাইরে একটা মিটিং হয়েছিল। গুপ্ত মিটিং।