Skip to main content

রাসেল বলতেন পুলিশ আর বিচারক, গণতন্ত্রের দুটো বড় সমস্যা। যদি এ দুটো ঠিকঠাক না হয় তো।

    জাস্টিস এর ক্ষেত্রে এই দুটো স্তম্ভ তো সত্যিই অপরিহার্য। যেখানে হাস্পাতাল আর মেডিক্যাল অক্সিজেনের এ হেন বেসামাল অবস্থা, প্রতিদিন মানুষের কি অসীম ধৈর্যের পরীক্ষা, এর থেকে বেরোনোর উপায় কি? শুধুই যদি বাইরের দেশের সাহায্যের প্রত্যাশায় থাকছি তবে আর এত এত কথা, আস্ফালনের মানে কি ছিল? দ্বিতীয় ঢেউ তো অপ্রকাশিত নয়, এক প্রকার ঘোষিতই তো ছিল।

    প্রতিদিন অক্সিজেনের অভাবে, বেডের অভাবে মৃত্যু পড়তে পড়তে অসাড় হয়ে যাচ্ছি। কোনো সান্ত্বনা আছে? নেই। কোনো জাস্টিস আছে? নেই। শুধু কথা আর কথা। এমনকি ভ্যাক্সিনের পর্যাপ্ত যোগানের কথাও শোনা যাচ্ছে না।

    আমি না হয় কড়া সমালোচনা করলাম। কিন্তু যে পরিবারগুলো সব হারিয়ে ফেলল, বা হারিয়ে ফেলার পথে, তাদের কি হবে? এর মধ্যে শুরু হয়েছে কালোবাজারি অক্সিজেন আর ওষুধ নিয়ে। গতবারে বারবার বলা হত থানায় ফোন করতে। এবারেও সেই কাজটা হচ্ছে না কেন? কেন বারবার ফেসবুকের পেজ জুড়ে এমন আবেদন হাহাকার? এমন সংকটে ফেসবুক টুইটারের তো সামাল দেওয়ার কথা না! কথা তো একটা সিস্টেমের। এমন ঘেঁটে যাচ্ছে কেন সব? কিচ্ছু বুঝতে পারছি না। মানে আমার হঠাৎ কোনো সমস্যা হলে আমায় ফেসবুকে বা টুইটারে লিখতে হবে। আর যারা, মানে যে শ্রেণীর মানুষরা এতটাও পারেন না, তারা? তারা কোথায় যাবেন? কোনো সহৃদয় ব্যক্তির মুখ চেয়ে পড়ে থাকবেন? এটা কোনো ব্যবস্থা হল? ফেসবুকে ফলাও করে নামীদামী মানুষেরা লিখে চলেছেন কোন ব্যক্তিবিশেষের তত্ত্বাবধানে হাস্পাতালে বেড পেয়েছেন, কি অক্সিজেন পেয়েছেন। আমার ওগুলো পড়ে আরো আতঙ্ক জন্মাচ্ছে। এটা তো কোনো উপায় হতে পারে না। এটা নিয়ে গর্ব করারও তো কোনো কারণ দেখি না। গত বছর পুলিশের ভূমিকা ছিল যথেষ্ট প্রশংসনীয়। এ বছরে ভোটের জন্য সব ঘেঁটে যা তা অবস্থা। তারাই বা কি করেন!

    কিন্তু যেটা আমার সব চাইতে ভয় লাগছে, আতঙ্ক লাগছে, এ মহামারী ছেলেখেলা তো না। কিছু কিছু ব্যক্তিগত উদ্যোগে এ সাংঘাতিক সমস্যার দিশা তো পাওয়া যাবেই না, আরো জটিল হয়ে যাবে। এটা রাস্তা না। রাস্তা হল একটা সিস্টেম দাঁড় করানো। এত বড় দেশে এত এত লক্ষকোটি মানুষের জন্য সুচারুভাবে ভোট নেওয়ার ব্যবস্থা করা যায়, আর তার মরণসংকটে জনসংখ্যার আর রুগী প্রবল সংখ্যার দোহাই দিয়ে ত্রাণ পাওয়া যায়? যায় না। আরো মাইক্রোভাবে প্রতিটা জোনকে ভেঙে দিয়ে না ব্যবস্থায় আনলে এ সম্ভব না। যে কোনো বড় সমস্যাকে ছোটো ছোটো ধাপে ভেঙে রাস্তা খুঁজতে হয়। যথামাত্রায় টেস্ট, আইসোলেশান, মনিটরিং - এর মধ্যে দিয়ে যদি ঠিকভাবে যাওয়া যায়, তবে এত বড় বড় বিপত্তি হওয়ার আগেই তো ঠেকানো যায়। নানা স্তরের মানুষকে কাজে লাগানো হোক না বেসিক মনিটরিং এর জন্য। অল্প কিছু প্রাথমিক প্রশিক্ষণ দিয়ে কি কাজটা শুরু করা যাচ্ছে না? যদি ভোটের ডিউটিতে এত এত কাজের মানুষ খুঁজে পাওয়া যায়, তবে আজ এই শতাব্দীর মহাসংকটে মানুষ পাওয়া যায় না বলে আমার বিশ্বাস হয় না। অন্তত বেসিক মনিটরিং, লোকাল চিকিৎসক, আশাকর্মী ইত্যাদি সবাইকে নিয়ে একটা সিস্টেম তৈরি করে, মাইক্রো জোনে ভাগ করে নিয়ে, কাজটা শুরু করা যায় না?

    আবারও বলছি। শুধুমাত্র কয়েকজনের ব্যক্তিগত উদ্যোগে এ ভয়ানক দাবানল নিভবে না। আপনি যদি বাড়ি থেকে এক বালতি জল এনে থাকেন তবে আপনার প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানাই। কিন্তু এ যে দাবানল। একে নেভাতে এক শৃঙ্খলাবদ্ধ কর্মসূচি চাই। আবেগ না, বিচক্ষণতা চাই। আর কবে হবে?