Skip to main content

 

সারাটা দিনের শেষে, তারার নীচে একবাটি মুড়ি আর দুটো শসা চিবাতে চিবাতে, চেনা অচেনা মানুষের সুখ-সম্পদের হিসাব করতে করতে, বিষাদে তলিয়ে যেতে যেতে, ঝিম ধরে যেত। তারপর অবসন্ন শরীর আর তার থেকে লক্ষগুণ অবসন্ন মন নিয়ে শুয়ে পড়ত।

ঘুম থেকে উঠেই আবার যখন মনে পড়ত, এ চন্দ্রসূর্য, গাছপালা ঘেরা জগতে সে একা নয়, বরং বহু সৌভাগ্যবান মানুষের সঙ্গে ভাগ করে নিতে হবে, তার পা খাট থেকে নামত না।

ক্রমে তার মধ্যে বৈরাগ্য আসতে শুরু করল। জগত আর ঈশ্বর দুই-ই শূন্য। ফলে বৈরাগ্যের রঙ এমন চড়তে শুরু করল সে মনোবিদের শরণাপন্ন হতে হল। কিন্তু সেখানেই আরো বিপত্তি। মনোবিদের বাড়ি, গাড়ি বৈভবে প্রাণে কাঁচের টুকরো চুরচুর হয়ে ছড়িয়ে গেল। বাড়ি এসে প্রেসক্রিপশন টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে কাশী চলে গেল।

কাশীতে সাধুদের বৈভব, মঠমিশনের বৈভব, মন্দিরে দেবতার সম্পদ দেখে বুঝল, সে এ জগতে ঠকেছেই শুধু। গঙ্গার ধারে বসে কাঁদল। কী করল সে! সব যে শূন্য হল!

একজন ল্যাংটো বাবাজী বসে বসে তার কান্না দেখছিল। কয়েক খেপ কান্নার পর যখন সে ক্লান্ত হয়ে কাশীর ঘাটে শুলো চিতিয়ে, তখন রাত দুটো। ন্যাংটো বাবাজী এসে বলল, একশোটা টাকা দে….গাঁজা খাব।

সে বলল, আমাকে খুন করে সব নিয়ে নাও।

যেমন বলা তেমনি কাজ। বাবাজী তার বুকের উপর বসে তার গলা টিপে ধরল। সে প্রথমে ঠাহর করতে পারেনি কী হচ্ছে। মুহূর্তেই ব্যাপারটা বুঝে হাউমাউ করে সে ল্যাংটো সাধুকে জোরে ধাক্কা দিল। সাধু পড়ল গঙ্গায়। যা হোক কোনোরকমে সাঁতরে উঠে বলল, ধাক্কা দিলি কেন? তুই তো বললি..

সে তাড়াতাড়ি একটা পাঁচশো টাকার নোট বাবাজীর হাতে দিয়ে বলল, আমাকে মাফ করো বাবা…মাফ করো…..

এই বলে সে দৌড়াতে লাগল। কাশীর চড়াই-উতরাই ঘাট বেয়ে যত দৌড়ায় হাঁফ লাগে তত। দৌড়াতে দৌড়াতে একদম মণিকর্ণিকা ঘাটে এসে দাঁড়ালো। দাহ হচ্ছে শব। আরো শব শুয়ে লাইনে। কিন্তু ও কে? আরে ওই ল্যাংটো বাবাজীই তো। তার দিকে তাকিয়ে হাসছে। রহস্যময় হাসি।

সে বসল। গোটা জগতে কী একটা সে মিস করে যাচ্ছিল। কী?

কানের কাছে কে যেন বলল, জ্বলন্ত চিতায় গলন্ত শরীরের তাপ….