ঘটনাটা ছিল এই, হলুদ একটা পাতা খসে দীঘির জলে পড়েছিল, ভাসছিল, তার উপর একটা নীল প্রজাপতি এসে বসেছিল।
গ্রামে অনেকেই দেখল। কিন্তু কেউ বলতে পারল না আসলে কি দেখল। কেউ বলল, প্রজাপতি ছিল, পাতা কই? কেউ বলল, পাতা ছিল, প্রজাপতি কই? কেউ বলল, আসলে পাতাটা রুগ্ন ছিল, কেউ বলল, পাতাটা বিদ্রোহী ছিল, কেউ বলল, আসলে গাছটাই চাইছিল না পাতাটা থাকুক।
আবার কেউ বলল, দীঘির জলের ষড়যন্ত্র ছিল। কেউ বলল, প্রজাপতিটার জন্যেই সব হল। কেউ বলল, বাতাসের জন্য সব হল। কেউ বলল, পাতাটাই ছিল বেইমান।
যারা দেখেনি, যারা শুধু শুনেছে, তারা এরপর থেকে এই দীঘির পাড়টা এড়িয়ে যেতে লাগল। যারা দেখেছে, তারা অন্যের দেখার বর্ণনার সঙ্গে নিজের দেখা গুলিয়ে মনের মধ্যে এক বিভীষিকা তৈরি করল।
শুধু কি এই? কেউ জলের স্তব লিখল। কেউ পাতার গান লিখল। কেউ প্রজাপতির কবিতা লিখল। কবি বলল, এর মধ্যে আছে ছন্দ। দার্শনিক বলল, পরিণামের সঙ্গে পরিণামীর কি সম্পর্ক ভেবে দেখা হয়েছে? রাজা বলল, এ তো অনাচার, আমি নিন্দা করি! বিরোধী শিবির বলল, আমাদের সময়ে এরকম হতই না, কোন স্পর্ধায় পাতার উপর বসে প্রজাপতি!
এখন কেউ মাদুলি পরে, কেউ তাবিজ পরে, কেউ সে গাছের নীচে বসে ঝাড়ফুঁক করে, শিল্পী ছবি আঁকে, দার্শনিক শুয়ে-বসে ভাবে, কেউ স্তব গায়, কেউ যাত্রাপালা লিখে অভিনয় করায়, কেউ ভাষণ দেয়।
এত সব হল, অথচ কেউ বলল না, ঘটনা তেমন কিছু নয়, একটা হলুদ পাতা উড়ে এসে জলে পড়েছিল, ভাসছিল, তার উপর একটা নীল প্রজাপতি এসে বসেছিল। এর কোনো মানে নেই। উদ্দেশ্য নেই। শুধু এক খণ্ড ছবি ছিল। এখন নেই।