সারা বিশ্বজুড়ে ভারতের করোনার এক ভয়াবহ ছবি দেখান হচ্ছে - নদীতে ভাসছে মৃতদেহ। নিশ্চিত নয়, তবু আশঙ্কা করা হচ্ছে এ করোনায় মৃত মানুষের দেহ।
প্রায় একশো বছর পেছিয়ে যাই। ১৯১৮ সাল, ভারতে তাণ্ডব চালাচ্ছে দুর্ভিক্ষ, যুদ্ধ আর সঙ্গে স্প্যানিশ ফ্লু। স্প্যানিশ ফ্লুতে ১৮ মিলিয়ন মানুষ মারা গিয়েছিলেন বলা হয়। যে মৃতের সংখ্যাটা ভারতেই সর্বাধিক ধরা হয়। কিন্তু সে পরিসংখ্যান ইত্যাদি নিয়ে লিখব না।
সেদিন নাকি গঙ্গায় জল আটকানোর জোগাড় হয়েছিল মৃতদেহের চাপে। অত কাঠ কোথায় যে অত মানুষের সৎকার হবে? বিখ্যাত হিন্দী কবি নিরালা তার পরিবারে স্ত্রী সহ, বহু আত্মীয়কে হারিয়েছিলেন সেই ফ্লুতে, কিন্তু সৎকারের জন্য কাঠ জোগাড় করে উঠতে পারেননি। তিনি লিখেছিলেন, গঙ্গা যেন স্ফীতকায় হয়ে উঠেছিল মানুষের লাশে লাশে। শুধু কি গঙ্গা? ১৯১৮ সালে স্যানিটারি কমিশনার লিখেছিলেন শুধু গঙ্গা না, ভারতের বহু নদী প্রায় বুজে এসেছিল মানুষের লাশে লাশে।
সেটা ছিল ১৯১৮ সাল। আজ ২০২১। হাহাকার, অসহায়তা, নির্মমতা সবের যেন আবার কোথায় পুনরাবৃত্তি ঘটছে। কিন্তু আজ তো দুর্ভিক্ষ নেই। বিশ্বযুদ্ধও দোরগোড়ায় কড়া নাড়ছে না। তবে?
এ তবের উত্তর তো কমবেশি সবাই বুঝছি। আজ দেখলাম কত কত ভেন্টিলেটর যা পিএম কেয়ার থেকে কেনা হয়েছিল সে সবে ধুলো জমছে, সারে সারে পড়ে আছে বিহারে, উত্তরপ্রদেশে হাস্পাতালে। সিল অবধি খোলা হয়নি। যে দেশ সর্বোচ্চ পরিমাণ ভ্যাক্সিন নির্মাতা বলে নিজেকে নিয়ে গর্ব করছিল সে-ই ভ্যাক্সিনের হাহাকারে আজ। এ সব লিখেই বা কি, আর বলেই বা কি। শুধু ভেসে আসা লাশগুলো একশো বছর আগে ভাসিয়ে নিয়ে গেল এই যা। এও তবে সভ্যতা, যারা নাকি মঙ্গলে চাঁদে রকেট পাঠাবে ভাবে!