ওই তো ক্ষুদে ক্ষুদে পা, বার পাঁচ ছয় ফেললেই ঝুলবারান্দাটা শেষ। বাচ্চাটা কি উন্মাদনায় সেইটুকুই প্রাণপণে দৌড়াচ্ছে বিকেলে। আকাশে ওড়া কোনো বাড়ির সাদা পায়রাদের দেখছে, হাত নাড়ছে, আবার দৌড়াচ্ছে। সাদা মেঘে বিকেলের হলুদ আলো। নীড়ে ফেরা বকের দল। এলোমেলো বাতাসের নারকেল বন কাঁপিয়ে যাওয়া। দীঘির জলে ঢেউ তুলে যাওয়া। সব হচ্ছে। ওই তো রাস্তা দিয়ে একদল কুকুর দৌড়াচ্ছে। হেঁটে গেল কি বড় একটা ষাঁড়। কেউ কাউকে আটকাচ্ছে না। কেউ কাউকে বারণ করছে না। কেউ বলছে না, খবরদার, বাড়ির বাইরে এক পাও না। গোলাপি ফ্রক, ছোট্টো দুটো পা, ওরই খালি বারণ।
তার অমলের মত অসুখ নেই কোনো। রবীন্দ্রনাথ যেমন 'ডাকঘরে' লিখেছেন। অসুখ তার শরীরে নেই। বাইরে অসুখ। আজ যদি অমল থাকত। যদি তার পিশেমশাই মাধব দত্ত, কবিরাজ, ঠাকুরদা, প্রহরী, ছেলের দল, এমনকি সুধার অবধি অসুখ হত? সে কি সবার বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়াত? বাইরে থেকে জিজ্ঞাসা করে আসত তাদের কুশল? আর বলত, "ওগো তোমরা কেমন আছ…. ভয় পেয়ো না…. রাজামশায়ের চিঠি আমার কাছে আসবে... রাজামশায় রাজবৈদ্যকে পাঠাবেন... ফকির আমায় বলে গেছে সে কথা... আবার সবাই সুস্থ হয়ে উঠবে…. তোমরা ভয় পেয়ো না…" .... এমনকি সেই অন্ধ ভিখারিকেও হয় তো রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে তার শুশ্রূষার ব্যবস্থা করবে রাজাকে বলে। কিন্তু এ সব তো কল্পনা। অলস কল্পনা। ওই গোলাপি ফ্রক হাওয়ায় উড়ে খাঁচার পাখির মত এদিকে ওদিক অস্থির হয়ে যাচ্ছে। রেলিং ধরে এত ভীষণ রাস্তার দিকে ঝুঁকে যাচ্ছে যে আমি ভয়ে দাঁড়িয়ে পড়ছি মাঝে মাঝে। পড়ে যাবে না তো! ও এতটাই দূরে যে আমার গলার আওয়াজও পৌঁছাবে না ওর অবধি।
সত্যিই কি একটা হল না? বড়রা এত এত কিছু আবিষ্কার করেও পৃথিবীটাকে সামলাতে পারল না। গুছিয়ে রাখতে পারল না সব কিছু। স্কুল, খেলার মাঠ সব তালা লেগে গেল। সেকি তার দোষে? অথচ তার একটু খাতা বই অগোছালো হলে বাড়ির লোকের কি রাগ! স্কুলে খেতে গিয়ে জামায় খাবার পড়লে, কি জামায় ধুলোকাদা মাখলে, কি স্কুলে বাংলায় কথা বলে ফেললে কি বকাবকি বড়দের। সব সময় সজাগ থাকতে হয়, খেয়াল রাখতে হয়… এ সব কথা তো বড়রাই বলে…. আর এই বেলা?