মা, এবার পুজোয় বাপের বাড়ি না, ছেলের বাড়ি এসো। দশ হাতে না গো, দুই হাতেই এসো। এসে দেখো, তোমার রান্নাঘর, শোয়ার ঘর, উঠান, পাতকুয়োতলা সব একরকম আছে। আলমারিতে রাখা তোমার সব শাড়ি, সেগুলোও আছে, একভাবে।
মা গো, এবার পুজোয়, বাপের বাড়ি না, ছেলের বাড়ি এসো। ওসব অস্ত্রটস্ত্র অসুর সিংহ থাক। তুমি বরং ফাঁকা হাতেই এসো। দুব্বো আর ফুলে আমি তোমায় বরণ করে নেব। শাঁখ বাজিয়ে, প্রদীপ সাজিয়ে আমিই আরতি করে ঘরে ডেকে নেব। আলতাও পরাব আমি। তুমি খাওয়ার ঘরে তোমার চেয়ারটাতেই বোসো।
মা গো, এবার পুজোয় বাপের বাড়ি না, ছেলের বাড়িই এসো। আমার বড্ড একা একা লাগে। সবাই আছে। তাও লাগে। বাড়িটা যেন ফাঁকা চণ্ডীমণ্ডপ। পুজোর আহ্বান নেই। ধূপধুনোর গন্ধ নেই। ঢাকঢোল কাঁসরের আনন্দধ্বনি নেই। শুধু দিনের পর দিন যাচ্ছে আকাশে ভাসা দিশাহীন মেঘের মত।
মা গো, এবার পুজোয় বাপের বাড়ি না। ছেলের বাড়ি এসো। প্যাণ্ডেলে না, পাখাটা চালিয়ে তোমার ঘরের খাটের উপর শুয়ো। সন্ধিপুজো-টুজো থাক। চায়ের কাপ হাতে সন্ধিলগ্নে আমার পাশে বোসো। শরতের হাওয়া আসুক তোমার গন্ধ মেখে। তোমার শান্ত স্নিগ্ধ প্রশান্তিতে ভরে উঠুক আমার যা কিছু রিক্ত,শুষ্ক, হতশ্রী। আমার বোকার মত কথায় আবার আগের মত হেসো।
মা গো, আটকাব না। এতদিনে তো এটুকু জেনেছিই, না চাইলেও তো আসেই দশমী। কার সাধ্যি ঠেকায়! আসুক দশমী। ভয় পাব না। কান্নাকাটি করে রাস্তা আটকাব না। তুমি যেও। আমি রাস্তা ছেড়ে দেব। তোমার ফিরে যাওয়া রাস্তায় পড়ে থাকা তোমার স্মৃতির যা কিছু সব, আবার তুলে নেব, রেখে দেব প্রাণের গভীরে। মা গো, তুমি এবার পুজোয় বাপের বাড়ি না, ছেলের বাড়ি এসো।