Skip to main content
badhon

আমরা তখন ইউটিউবে কার্টুন দেখছি। যে কার্টুনের অর্থ তাৎপর্য এমনি সময়ে বিন্দুমাত্র বুদ্ধিগোচর হয় না, সেই কার্টুনই কি অসম্ভব বাস্তব তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠল ইনি কোলে বসতেই। খানিক বাদে ইনি বললেন, তোমার মোবাইলটা দাও। দিলাম। তাতে চলল --- "টুম্পা সোনা"। আর ইউটিউবে তার সঙ্গেই চলছে চুচু চ্যানেলের কার্টুন। উনি কোল থেকে নেমে দু'পাক নেচে আবার কোলে বসে পড়ছেন। আবার কার্টুনের ঘটনাপ্রবাহে মগ্ন।

      তারপর শুরু হল বারান্দায় একই সঙ্গে বাস্কেটবল আর ফুটবল খেলা। অবশ্যই বিশ্ব সংসারে এই দুটো খেলা একসঙ্গে প্রবর্তন করার মত প্রতিভাধরের সংখ্যা নিতান্তই হাতে গোনাই হবে। কি ভাবে হল? বলছি।

      বারান্দায় দরজা আর গ্রিলের সঙ্গে দড়ি ঝুলিয়ে হল বাস্কেটবল খেলার খোপ, আর দুটো সুটকেস পাশাপাশি রেখে হল গোলপোস্টের গর্ত। এইবার আপনি জানেন না বলটা হাতে নিয়ে ওই গর্ত দিয়ে ফেলতে হবে না পায়ে করে দুই সুটকেশের ফাঁকে গলিয়ে দিতে হবে। তিনি যা বলবেন তাই আপনাকে করতে হবে। কিন্তু এই খেলাতেই বা শেষ হয় কি? তিনি আমাকে বল আর দুই খোপের সঙ্গে দাঁড় করিয়ে চলে গেলেন বাবার পাশে। বাবা তখন ট্যাবে তাস খেলছেন। বাবার হাত থেকে ট্যাবটা নিলেন। বাবা তখন খেলার মধ্যিখানে। বাবা তাকে যে তাসটায় ক্লিক করতে বলে সে তার আশেপাশে কোনো একটায় ক্লিক করে। বাবা বলেন, গেল গেল.., সে হেসে মজা পেয়ে বলে, কি গেল? বাবা বললেন, ওরে দেখ আমার পয়েন্ট মাইনাসে চলে গেল কিনা।

      এরপর আবার ফুটবল আর বাস্কেটবলের যৌথখেলা, সঙ্গে যোগ হল ফুটবল নিয়ে ক্যাচ ক্যাচ খেলা। এবার আরো দু'জন বন্ধু, দেবাশীষ আর সাগর। সঙ্গে তার বাবা তো আছেনই, আদিত্য। ঘেমে নেয়ে একশা। বিরতি আনল চিপসের প্যাকেট। খেতে খেতে সে তার বাবাকে সাবধান করে বলল, "আমি যে এসব খাচ্ছি বাড়িতে তুমিও বলবে না, আমিও বলব না।" এই বলে কয়েকটা চিপস বাবার মুখে গুঁজে দিয়ে বাবাকেও একই 'অপরাধের' সঙ্গী করে নিল। মায়ের বিচারে সে যেন একাই শাস্তি না পায় সেই ব্যবস্থা হয়ে গেল।

      তারপর তার স্নানের সময় হল। বাবার বাইকে বসে হুস্...। আমার ঘরে ওর যাওয়ার গন্ধ, দস্যিপনার চিহ্ন আর চিনচিনে ব্যথা।

      সংসারে দুটি বাঁধন হয়। একজন বেঁধে স্বাধীনতা দেয়। যেন সোনার লঙ্কা, তুমি আমার শর্তে বাঁচো, আমি তোমায় চূড়ান্ত স্বাধীনতা দেব।

      আরেকটা হল স্বাধীনতা দিয়ে বেঁধে রাখা। যে নিজেকে মনে করায় না, ভুলে যাওয়ার চূড়ান্ত স্বাধীনতা দেয়, কিন্তু তাকে ভোলা যায় না। এমনই বাঁধন।

      প্রথমজনের থেকে পালাবার জো নেই। দ্বিতীয়জনের থেকে দূরে থাকার জো নেই। ঈশ্বরের বাঁধনকে রবীন্দ্রনাথ 'রাজা' নাটকে এই বাঁধনই বলেছেন। শিশুর বাঁধনও এই দ্বিতীয় গোত্রের। সে উৎপাতের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার মত যন্ত্রণা খুব কমই আছে সংসারে।