মালা থেকে খসে পড়ল পদ্ম। মন্দিরের ধুলোর উপর। ছোটো পুরোহিত বলল, অনিষ্ট হবে। মধ্যম পুরোহিত বলল, অনর্থ হবে। বড় পুরোহিত বলল, ঘটবে প্রলয়।
আরতি শুরু হল। দমকা সজল হাওয়ায় নিভল প্রদীপ। তিন পুরোহিত হাহাকার করে পড়ল ভগবানের পায়ে। "রক্ষা করো, রক্ষা করো নাথ"।
কেউ ছুঁলো না ধুলোয় পড়া পদ্মকে। এড়িয়ে গেল। ও যে অভিশপ্ত! দেবতা ওকে ত্যাগ করল, নাকি ও করল দেবতাকে ত্যাগ? এই নিয়ে লাগল তর্ক। মীমাংসা হল না। ভয় বাড়ল। শঙ্কা জন্মালো।
========
গভীর রাত। ভগবান এসে দাঁড়ালেন ধুলোয় পড়া পদ্মের সামনে। তুলে নিলেন হাতে। বললেন এক গল্প।
==========
বহুযুগ আগে, এক শ্রাবণে, আকাশ ভেঙে নেমে এসেছিল তোমার কাছে। দীঘির জলে লেগেছিল প্রলয় দোলা। দীঘি বলেছিল, চারদিক রক্ষা করে আছি, বেঁধে শক্ত ঘাটে নিজেকে, ভাসিও না আমায়!
তুমি শুধু তোমার সব কটা পাপড়ি মেলে বলেছিলে, এসো, বসো।
শ্রাবণের মেঘ তোমায় জিজ্ঞাসা করেছিল, ভয় করে না আমায়! যদি ভাসিয়ে নিয়ে যাই?
তুমি বলেছিলে, নিয়ে যাও। তোমার মধ্যে দেখেছি সুন্দরকে! ভয় নেই তাই!
ধুলো লাগা পদ্ম বলল, সেদিন সে উন্মাদ মেঘের শ্রাবণধারা আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল সব সীমানার বাইরে..... যখন নিঃস্ব হলাম.... দেখলাম তুমি দাঁড়িয়ে দিগন্তলীন... একা! সব হারিয়ে সার্থক হলাম সেদিন..... মনে পড়ছে আমার! কিন্তু আমায় ধুলোয় ফেললে কেন?
ভগবান হাসলেন.... আমাকেও ফাঁকি দিতে চাও বুঝি.... সত্যি বলো তো.... চেয়েছিলে নাকি আমার গলায় শোভিত হতে? নাকি চেয়েছিলে ধুলোয় মিশে যেতে... মানহীন.... পরিচয়হীন......
পদ্ম বলল, আপনাকে ফাঁকি দেওয়া যায় না। আমি চাইনি আপনার প্রস্তর মূর্তিতে নিস্প্রাণ অলঙ্কার হয়ে শুকিয়ে মরতে ধূপ, দীপ আর স্ত্রোত্রের ভিড়ে। আমি চেয়েছিলাম এই ধুলোয় শুয়ে আপনার লীলা দেখতে বিশ্বজুড়ে..... ধুলো না হলে লীলা বোঝা যায় না যে প্রভু.. মান হারানোর ভয়ে সব আঁধার যে সেখানে.... আমার সব কেড়ে নাও... কিন্তু আমায় ধুলো থেকে বঞ্চিত কোরো না.....
=======
পরের দিন কেউ দেখেনি পদ্মকে আর। তাকে ঝোড়ো হাওয়া নিয়ে ফিরছে তখন রাস্তায় রাস্তায়..... ধুলোয় ধুলোয়...... তার সঙ্গে ফিরছে বাঁশির তান...... কেউ শুনতে পায়..... কেউ পায় না..... ধুলো জানে সে কথা..... পদ্ম সে খোঁজও রাখে না....