চিত্রাঙ্গদায় পড়েছিলাম, কুরূপা চিত্রাঙ্গদা অর্জুনের মন জয় করার জন্য সুরূপা হয়েছিলেন মদনের আশীর্বাদে। অর্জুনের মনও পেয়েছিলেন। তারপর কয়েকদিনের মধ্যে ক্লান্তি অবসাদে আচ্ছন্ন হয়েছিলেন। অন্তত রবীন্দ্রনাথ তেমনই দেখিয়েছিলেন।
আজ মদনের দরকার নেই। ক্যামেরার নানা কারসাজি আছে। যাকে চোখের সামনে দেখেছি একরূপে, তাকেই মোবাইলের স্ক্রিনে দেখে তাজ্জব বনে যাই। ভাবি একি আমার দেখার সঙ্কীর্ণতা! যে রূপ ক্যামেরার কারসাজি বানাতে পারে, আমার চোখ কেন পারে না!
তারপরেই আবার প্রশ্ন জাগে, তবে কি অনেকের মধ্যেই মদনের আশীর্বাদের তৃষ্ণা থাকে? অনেকেই তবে তার রূপ, তার রঙ নিয়ে সন্তুষ্ট নয়! এতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু শেষে কি তাদেরও ক্লান্তি অবসাদ আসে? নকল থেকে আসল হয়ে সবার সামনে আসার ইচ্ছা হয়? কিন্তু "আমি চিত্রাঙ্গদা, নহি দেবী, নহি সামান্যা নারী"..... এ বলার ঐশ্বর্য যার থাকে না, সেকি শুধুই মদন বা ক্যামেরার এ-আইয়ের আড়ালে বাঁচবে?
মিথ্যার মধ্যে একটা ক্লান্তি আছে, অবসন্নতা আছে। এ আমাদের স্বভাবেই আছে। কিন্তু যেদিন ক্লান্তি আসবে সেদিন সে তার নিজের কাছে নিজের অনাকাঙ্ক্ষিত রূপকে কীভাবে নেবে? গর্বে, নাকি লজ্জায়?
যদি কোনোটাই না হয়? যদি সে যেমন ঠিক তেমনভাবেই সামনে আসে? এমনকি শরৎবাবুকে তাকে জিতিয়ে দেওয়ার অনুরোধ না করেই?
জানি না কী হবে। হয় তো কেউ দেখবে না। হয় তো লাইক কমেন্টস কম হবে। কিন্তু সেটাকে কী সে উপেক্ষা বলে দেখবে, নাকি সহজ ভাবে সেটাই সত্য বলে মেনে নেবে?
সহজভাবে সহজ সত্যকে মেনে নেওয়া সত্যিই কী কঠিন না! সহজকে সহজভাবে পেতে যে কত জটিল রাস্তায় চড়াই-উতরাই সামলাতে হয়! ধন্যি মানুষের ভাগ্য বটে!