Skip to main content

desh 01

'শতরূপে সারদা'য় আশাপূর্ণাদেবীর প্রবন্ধ পড়েছিলাম। আজ 'দেশ' পত্রিকায় মা সারদাকে নিয়ে লিখলেন আপনি, Yashodhara Ray Chaudhuri
আমার যে বন্ধু মা সারদার সংখ্যাটি নিয়ে এলো, সাইকেলের ক্যারিয়ারে বসিয়ে, সেই ছবিতে মাটির ক্যানভাস। "হাতে পায়ে দিনগত পাপক্ষয়ের মাটি লাগানো আছে"। আপনি লিখলেন। পড়তে গিয়ে চমকে গেলাম সিমোন ক্যারোলের উল্লেখে।

প্রবন্ধটি বোধে, বিশ্লেষণে, অনুভবে হৃদয়কে ছুঁয়ে গেল। সংগ্রহে রাখার মত। যেমন আশাপূর্ণাদেবীর প্রবন্ধটি। মহাশ্বেতাদেবী একবার মা সারদা প্রসঙ্গে টিভিতে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে বলেছিলেন, "মা" একটা মন্ত্র হয়ে গেল জীবনে।

রবীন্দ্রনাথ মন্ত্র মানে বলেছিলেন, যা দিয়ে নেমে যাওয়া তানপুরার তার আবার বেঁধে নেওয়া যায়। সংসারে নানা আঘাতে, দুঃখে, হতাশায় তার বারবার নেমে যায়। সুর হারিয়ে যায়। সে সুর আবার তুলে যা দেয় সে-ই মন্ত্র। মা সেই মন্ত্র। মায়ের জীবনের ছোটো ছোটো ঘটনাকে তুলে এনে আপনি আপনার প্রদীপকে তিনটে শিখায় দেখালেন। ভক্তির আরতি বোধের আরতিতে মিশল আমার চেতনায়।

এইবার বলি একটা ব্যক্তিগত কথা। আপনার লেখা পড়তে পড়তে আপনার মায়ের মুখটা মনে পড়ল। মনে পড়ল মায়ের কণ্ঠে স্তবগান। যা আপনি কয়েকবার আমাদের শোনার সৌভাগ্য করে দিয়েছেন। স্নিগ্ধ, শান্ত, দৃঢ় প্রত্যয়ে গড়া আপনার মুখের ছবিটা। এ লেখা পড়তে পড়তে যা স্মরণে এলো। আমার মনে হয় আমাদের চেতনায় মাতৃত্বের একটা ধারাবাহিকতা থাকে। সে শব্দটা পুরুষ নারী লিঙ্গভেদে যায় না। নইলে গৌতম বুদ্ধের শব্দবোধ এত দুর্বল নিশ্চয় ছিল না যে উনি সারা জগতকে "মায়ের মত" ভালোবাসার কথা বলবেন। ওই সে বললাম, আমাদের বোধে একটা মাতৃত্বের ধারাবাহিকতা আছে বলে আমার মনে হয়।

এ লেখা আপনাকে আমার খোলা চিঠির মত। আপনি কদিন আগে আপনার টাইমলাইনে জিজ্ঞাসা করেছিলেন কি পড়তে চাই এ বছরে। সেখানে উত্তর দিইনি কিছু। এখানে লিখলাম, ইচ্ছা হয় আপনার মায়ের কথা জানি। পড়ি। ওই স্তব উচ্চারণের পিছনে দাঁড়ানো মানুষটার বোধকে স্পর্শ করি।

মা সারদার ছবিতে অনেকে নিজের মায়ের ছবি দেখতে পান। নিজের চোখেও দেখেছি। বেলুড় মঠে মায়ের মন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে এক বাচ্চা তার মাকে জিজ্ঞাসা করছে, মা তোমার ছবি কেন ওখানে?

বাচ্চাটার ছোটো আঙুলের ইঙ্গিত মা সারদার পটের দিকে।

সে মা লজ্জা পেয়ে তাড়াতাড়ি তাকে কোলে তুলে নিয়ে বললেন, বলতে নেই... ছি ছি।

কিন্তু সে বলে তো ফেলেইছে। চণ্ডীতে আছে দাবানল ইত্যাদি নানা ভয়ংকর বিধ্বংসী সব কিছুর মধ্যে যিনি রক্ষা করছেন তিনি মা। এত যুদ্ধ, এত হানাহানি, ক্ষয়ক্ষতির মধ্যেও যে জগতটা চলছে, প্রাণপণে কি এক শক্তি আবার সব কিছু গুছিয়ে তুলে রাখতে চাইছে, সে তো মায়ের শক্তিই। যা রাখতে চায় সে-ই মা।

অপূর্ব লাগল আপনার লেখাটা। আমার বন্ধুদের বলব সংগ্রহ করে নেওয়ার জন্য এই সংখ্যাটা।

আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা, ভালোবাসা জানবেন।

desh 02

Category