Skip to main content
chobi

পাগল সারাদিন রাস্তায় রাস্তায় ঘোরে, সবাইকে জিজ্ঞাসা করে, আপনি আমার কোনো ছবি লুকিয়ে রেখেছেন?

কেউ গাল পাড়ে। কেউ হাসে। কেউ উত্তর দেয় না।

পাগল গাছ তলায় শুয়ে শুয়ে রাতভর চিন্তা করে। কে যেন তার ছবিটা চুরি করে লুকিয়ে রেখেছে। কে সে?

একদিন একজনের দয়া হল। সে পাগলকে দাঁড় করিয়ে ছবি তুলল। তারপর ছবি দেখিয়ে বলল, এই কি সেই ছবি?

পাগল ছবিটা দেখতে দেখতে হো হো করে হেসে উঠল… রাস্তায় শুয়েই পড়ল হাসতে হাসতে…. বলল, এ কে গো? একে কোথায় পেলে? একে আমি চিনতাম! খুব চেনা গো…. আরে এর একটা নামও ছিল….. কি সজল ঘোষ… না মিত্র… না বাড়ুজ্জ্যে কি যেন…. অনেক দিন দেখি না একে….. কে যে যেন বলল সেদিন, এ নাকি মরে গেছে…..

বলতে বলতে পাগল গম্ভীর হল। চোখের কোল চিকচিক করে উঠল। বলল, ফেলে দাও এ ছবি…. মড়া মানুষের ছবি রাখে না…. আর একটা কথা শোনো….

এই বলে পাগল মুখটা সে লোকের কানের কাছে এনে বলল, লোকটা সুখীও ছিল না…. ফেলে দাও… ফেলে দাও…… হ্যাঁ গো…. আমার ছবি তুমি লুকাওনি তো গো…. আর এই নকল ছবি দিয়ে আমায় ঠকাতে চাইছ না তো গো… এই এই বলো না.… সত্যিই বলো না… আসল ছবিখানা কি তোমার কাছে!?.....

সে মানুষটা আর দাঁড়ালো না। হনহন করে হেঁটে চলে গেল। পাগল ভ্রুক্ষেপহীন। সে আবার বেরোলো তার নিরুদ্দেশ হওয়া ছবি খুঁজতে।

=======

পাগল দীঘির ধারে শিব মন্দিরের চাতালে ঘুমিয়ে। ভীষণ গরম। পাগলের গায়ে এসে পড়েছে পাশের অশ্বত্থ গাছের ছায়া। ছায়া দুলছে, মনে হচ্ছে পাগলের গায়ে কে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। যেন ঝালর দিয়ে আরতি করছে কেউ।

হঠাৎ করে কালবৈশাখীর মেঘ করে এলো। ঝড় উঠল দেখতে দেখতে। শুরু হল মুষলধারে বৃষ্টি। পাগলের গায়ে বৃষ্টির ফোঁটা পড়তেই সে ধড়ফড় করে উঠে বসল। চারদিক দেখে থ। কি তাণ্ডব চলছে, একি!

হঠাৎ পাগল এক লাফে দীঘির কাছে এসে দাঁড়ালো। দীঘির জল ঝড়ের দাপট সহ্য করতে হিমসিম খাচ্ছে। পাগল ঝাঁপ দিয়ে পড়ল তার বুকে। জলের মধ্যে দাপাতে দাপাতে বলল, তুই রেখেছিস আমার ছবি…এই তো আমি…. এই তো… এই তো…..

পাগল আকাশে মেঘের ধুন্ধুমার কাণ্ড দেখতে দেখতে বলল…. এই যে আমি…. এই যে…. এই যে আমার ছবি…. এই যে জলে… এই যে ঢেউয়ে…. এই যে….

বারবার জল খাচ্ছে পাগল, আবার কোনো রকমে মাথা তুলে আকাশের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলছে…. এই যে… এই যে গো আমি….. এই যে আমার ছবি…. তুমি চিনতে পারছ?……

মেঘ কেটে চাঁদ উঠল যখন, তখন সন্ধ্যে হয়ে রাত গড়াচ্ছে। পাগলের প্রাণহীন শরীরটা দীঘির মাঝখানে ভেসে আছে। যেন স্থির দ্বীপ একটা। তার বুকের উপর বসে একটা পানকৌড়ি। চাঁদের আলোয় পানকৌড়ির ছায়া পড়েছে পাগলের মুখে। কি যেন একটা ছবি আঁকা হয়েছে। ছায়াগুলো যেন পাহাড়। সে পাহাড়ের উপর, পাগলের কপালে বড় এক বিন্দু টলমল জল… সে জলে চাঁদের প্রতিচ্ছবি… পাহাড়ের কোল বেয়ে যেন উঠেছে কোনো অন্য জগতের চাঁদ, এই জগতের শরীরে… প্রাণ হারানো শরীরে…. কিসের স্বপ্ন নিয়ে…..