Skip to main content

 

আমার সঙ্গে তার পরিচয় ছিল না। তবু রাস্তা দিয়ে যেতে দু একবার দেখেছি। উদাস চোখ। যেন পুরোনো সাবানের বাক্স। এখনও সাবানের গন্ধ লেগে আছে। সাবান নেই। মানুষটা সুখ খোঁজে না। সুখের উপর বিশ্বাস নেই। দুঃখ নিয়ে আদিখ্যেতাও নেই, হা-হুতাশও নেই। একদিন শুনলাম, সে মারা গেছে। এমন হাসি পেল শুনে। মনে হল মৃত্যু যেন অনেকদিন পর কারোর কাছে জব্দ হল। ছিনিয়ে নেওয়ার কিছু ছিল না। নিঃশেষে শেষ করারও কিছু ছিল না। কী অপ্রস্তুতই না লেগে থাকবে মৃত্যুর ওর শিয়রপানে এসে। বেশ কয়েক বছর গেল। একদিন একটা ঘেয়ো কুকুরকে দেখি কোলে করে নিয়ে একটা বাচ্চা যাচ্ছে। তার মুখের মধ্যে সেই মানুষটার আদল। তার পিছু নিলাম। তার বাড়ির দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বললাম, তোমার দাদু ছিলেন কেউ? সে বলল, ছিল। বললাম, ছবি আছে? সে বলল, ভেতরে এসো। ওর কথা বলছ? দেওয়ালে কোটপ্যান্ট পরা আপিসে যাওয়া ছবি। হ্যাঁ, সেই তো। কিন্তু এতো অন্য মানুষ। সাবানের কেসে দামী সাবান। বললাম, মারা গেছেন? সে বলল, হ্যাঁ। আমার বাবা মারা যাওয়ার পর কেমন হয়ে গেল। বললাম, বাড়িতে কে আছে তোমার? সে বলল, ঠাকুমা। বলতে বলতে এক বৃদ্ধা এসে দাঁড়াল। তার চোখের উপর মোছা আলপনার অবশিষ্ট সুখের আভিজাত্য। বলল, কে আপনি? ওর ঠাকুর্দাকে চিনতেন? শুনছিলাম ভিতর থেকে। আসুন ঘরে আসুন। মা বাপ মরা ছেলেটাকে নিয়ে যে কী অথৈ জলে আমি। ঘেয়ো কুকুরটা উঠানের এক কোণে ঘুমিয়ে পড়েছে। বাচ্চাটা তার মুখের কাছে ভাঙা কৌটোতে জল রাখতে রাখতে বলল, দাদু খুব কুকুর ভালোবাসত। গাছের ছায়ার ফাঁকে ফাঁকে রোদ কুকুরটার শরীরে হাত বুলাচ্ছে। ঠাকুমা বলল, ওর দাদুর প্রাণ ছিল ও। আলপনা আর্দ্র হল। বললাম, আমি ওকে চিনতাম। ভীষণভাবে চিনতাম। এতবড় সত্যি কথাটা এই মুহূর্তে আবিষ্কার করলাম। বললাম, মৃত্যু পারেনি। ঠাকুমা বলল, কিছু বললেন? বললাম, না। আসি আজ। আবার আসব। একটা উঠান রেখে এলাম, যেখানে ঘেয়ো কুকুর আরামে শোয়। এ ঠিকানা তো ভোলার নয়।