Skip to main content

বুবুন ওই জন্যেই তো রাত্রে ফ্রিজ খোলে না। কতবার বাবাকে, মাকে, রান্নার পিসিকে, বন্ধুদের বলতে চেয়েছে, কেউ বিশ্বাস করেনি। ভাবে ফোরে পড়ে, তাই বানিয়ে বানিয়ে মিছিমিছি বলে।

      বুবুন পা টিপে টিপে বড় ঘরের দিকে যাচ্ছে। মা ঘুমিয়ে পড়েছে। বাবার নাইট ডিউটি। আর তাছাড়া স্ট্রবেরীর গলার আওয়াজ শোনেওনি কোনোদিন। ফ্রিজটা খুলতেই আলু বলল, তোমার মায়ের এটা খুব বাড়াবাড়ি, আমায় কেউ কোনোদিন ফ্রিজে রেখেছে বলে তো শুনিনি। আদা পাশ থেকে হাই তুলে বলল, তাই না তাই, আমারও সেই এক কথা।

      বুবুন মেঝেতে বসে পড়েছে এতক্ষণে, সে বলল, আমি বলেছি, মা শোনে না।

হঠাৎ একটা বরবটি তড়াক করে লাফ দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এসে বলল, এই জানো বুবুন, আমার না ভীষণ ভয় লাগে।

বুবুন বরবটিটাকে আবার ফ্রিজের মধ্যে ঢুকিয়ে বলল, কিসের?

বরবটি আবার এক লাফে বাইরে বেরিয়ে এসে বলল, আমার ভয় লাগে বাবা বলতে, তুমি টমেটোকে জিজ্ঞাসা করো।

বুবুন ফ্রিজের উপরের তাকের দিকে তাকিয়ে দেখল আধখানা টমেটো মুখটা গম্ভীর করে বলল, আজ আমায় কেমন লাগল?

বুবুন বলল, টকটক…

বরবটি এক লাফে টমেটোর পাশে গিয়ে তাকে জড়িয়ে বলল, ধুর..., তুমি ওসব না বলে বলো না, আসল কথাটা বলো না...।

টমেটো কিছু বলতে যাবে এমন সময় পালংশাক বলল, কাউকে বলতে হবে না, আমিই বলছি।

বরবটি একলাফে পালংশাকের মধ্যে ঢুকে পড়ে বলল, হ্যাঁ হ্যাঁ সেই ভালো, তুমিই বলো।

পালংশাক বলল, তোমরা উপরের খাপটাতে মুরগী, মাছ এই সব রাখো না?

বুবুন বলল, হ্যাঁ।

বরবটি বলল কাঁদো কাঁদো গলায়, কাঁচা রাখো না?

বুবুন বলল, হ্যাঁ, সবাই রাখে।

পালং বলল, কে রাখে সে কথা নয়, ওরা খুব বিরক্ত করে…

বুবুন বলল, মানে?

টমেটো বলল, মানে ওরা ওই খোপে হাঁটে ধুপধাপ, আমাদের নাম ধরে ডাকে, আমাদের কাউকে কাউকে বলে দরজাটা বাইরে থেকে খুলে দিতে।

বুবুন বলল, তোমরা খুলেছ?

পালং বলল, পাগল হলে তুমি? তারপর তারা এই আমাদের এইখানে এসে বাসা বাঁধুক আর আমরা গন্ধে মরি আর কি!

টমেটো বলল, জানো ওরা কোনো একবাড়িতে এরকম খুলে দিয়েছিল দরজাটা বলে বারোটা ঢেড়সের ঘাড় মটকে দিয়েছিল?

বরবটি, “ও মা গো... আমাদের কি হবে গো”..., বলে কাঁদতে শুরু করে দিয়েছে এদিকে।

ওদিকে একটা ফুলকপি তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য এগিয়ে গেল। একটা বাঁধাকপিকে আলু বলল, অ্যাই, তুমি সারাক্ষণ নিজেকে এরকম ঢেকে রাখো কেন?

বাঁধাকপি বলল, আমি জন্ম থেকেই এরকম।

ব্রকোলি এতক্ষণ চুপচাপ শুনছিল। সে এবার বলল, আমার ভয়টয় করে না, তবে এটা ঠিক এরা বড্ড বাড়াবাড়ি করছে।

লাউ বলল, বিশেষ করে অমাবস্যায়... আমি খেয়াল করে দেখেছি… এই আজই তো অমাবস্যা...

লাউ কথাটা বলতে না বলতেই সবাই চুপ করে গেল। বুবুনের গায়ের লোমগুলো খাঁড়া হয়ে গেল। একবার ভাবল ফ্রিজের দরজাটা বন্ধ করে চলে যায়। তারপর মনে হল, দেখিই না। ফ্রিজে আজ মাছ আর মুরগী দুটোই আছে। তাও কাঁচা।

বুবুন ফ্রিজের দরজাটা বন্ধ করার সময় চুপি চুপি পালংকে বলল, আমি বাইরেই অপেক্ষা করছি। ভয় পেয়ো না।

বুবুন একটা চেয়ার টেনে ফ্রিজের কাছে নিয়ে গিয়ে অপেক্ষা করতে শুরু করল। অল্প অল্প ভয় করছে না তা নয়। কিন্তু মুরগীর ভূত আর মাছের ভূত তার কি করবে?

একটু একটু গলাটা শুকাচ্ছে বলে বুবুন যেই হাত বাড়িয়ে ডাইনিং টেবিল থেকে জলের বোতলটা নিতে যাবে, অমনি শোনে ডিপ ফ্রিজের ভিতর থেকে ঠুক ঠুক শব্দ।

বুবুন কান পেতে রাখল, আর কি শোনা যায়।

হঠাৎ মনে হল একটা খকখকে গলায় কে বলেছে, এই বাইরে যে বসে আছো... একটু দরজাটা খোলো না ভাই... আমরা কিচ্ছু করব না...

বুবুন ডিপ ফ্রিজের দরজাটা খুলল। মাছ আর মুরগী দুটোই কেটে পিস পিস করে প্লাস্টিকে মোড়া। বুবুন তাকিয়ে দেখল প্লাস্টিকের সঙ্গে জড়ানো গার্ডারটা নেই। হঠাৎ মনে হল তার কাঁধের উপর দিয়ে কেউ লাফিয়ে গেল।

বুবুন পিছন ফিরে দেখে একটা মুরগী টেবিলের উপর দাঁড়িয়ে, তার দিকে তাকিয়ে আছে। মুরগীটা বলল, আমরা বেশিক্ষণ থাকব না, একটু খোলা হাওয়া খেয়েই আবার ঢুকে যাব।

বুবুন অবাক। আমরা? কে আছে আর?

ভালো করে তাকিয়ে খেয়াল করতেই চোখে পড়ল একটা বড় রুইমাছ। বুবুন তাকাতেই খাবি খেতে খেতে বলল, অল্পক্ষণ থাকি না একটু... বড্ড ঠাণ্ডা ভেতরটা।

ওদিকে ফ্রিজের নীচের দিক থেকে হইহট্টগোল বেঁধে গেছে। বুবুন মুরগী আর মাছকে কিছু উত্তর না দিয়ে ফ্রীজের বড় দরজাটা খুলতেই দেখে কয়েকটা ডিম পালংশাকের মধ্যে বসে। বুবুন তাকাতেই বলল, আমরা একটু বাইরে আসব?

বুবুন বলল, কেন?

ডিম বলল, আমাদের মত গলার আওয়াজ পেলাম কার যেন বাইরে…

বুবুন ডিমগুলোকে বাইরে এনে টেবিলে রাখল। মুরগীটা এসে ডিমগুলোর উপর হাওয়ার মত পালক বিছিয়ে বলল, তোদের আর মুরগী হওয়া হল না রে…

মাছটা খাবি খেতে খেতে বলল, আচ্ছা মোরগও তো হতে পারত…

মুরগী কিছু একটা বলতে যাবে, হঠাৎ একটা ডিম গড়িয়ে টেবিলের ধারের দিকে যেতে শুরু করেছে। বুবুন এক লাফে ডিমটা ধরতে যাবে, হঠাৎ মাথায় বিশাল গুঁতো খেল…

“আবার তুই খাট থেকে মেঝেতে পড়েছিস... বিছানা ভিজিয়েছিস আজ?... দেখি…”, মায়ের গলা…

বুবুন উঠতে যাবে... জানলা দিয়ে আলো এসে ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় পড়েছে... মনে হচ্ছে ঘরের মধ্যে যেন ফ্ল্যাশ হচ্ছে আলোর…

মা বলছে, কি করে যে একটা ডিম ফ্রিজ থেকে মাটিতে পড়ে ফেটে গেল কিছুই বুঝলাম না... তুই কি রাতে জল নিতে উঠেছিলি?

বুবুনের কিচ্ছু মনে পড়ছে না। সে দেখল আয়নার ওই চোখ ঝলসানো আলোয় একটা মুরগীর মুখের মত কি দাঁড়িয়ে... বুবুন চোখ বন্ধ করে বলল, আজ আমি ডিম মাংস মাছ কিচ্ছু খাব না...