যে গপ্পোটা বলে এবারের মত বইমেলা পর্বের ইতি টানি।
এখন এদ্দিন তো বাস, অটো গুঁতিয়ে মেলায় যেতে হত। ফেরার সময় বাসের জন্য কি ভোগান্তি হত। এইবারে তো মেট্রো। সোজা শিয়ালদা।
তো বইমেলা থেকে বেরিয়ে মেট্রোতে উঠলাম। বিশাল ভিড়। শরীরটা ক্লান্ত। মনটা ভীষণ খুশী। তো একটা স্টেশান পরেই এক তরুণ তরুণী উঠল। দরজার কাছে দাঁড়ালো। ভিড়, জনগণ, কোলাহল - সমাজ সংসার মিছে সব হয়ে গেছে তাদের কাছে। সে ভালো। ভালোবাসা জগত না ভোলালো তো কেমন ভালোবাসা! মেয়েটা কি একটা বলছে ছেলেটার কানে, ছেলেটা হাসতে হাসতে মেয়েটার কাঁধে মাথা রাখছে। আবার ছেলেটা কি বলছে, মেয়েটা হাসতে হাসতে ছেলেটার বুকে মাথা রাখছে। যেন প্রবল ঝড়ে দুটো গাছ পাশাপাশি।
ওদিকে নির্লিপ্ত গলায় পরের স্টেশান, কোনদিকে প্লাটফর্ম, প্লাটফর্ম আর ট্রেনের দূরত্ব মেপে নামুন ইত্যাদি বেরসিকের মত ঘোষণা করেই যাচ্ছে।
হঠাৎ মেয়েটা চীৎকার করে উঠল, আঁক বলে!
কি হল তাই বলি। ছেলেটা বেশ কিছুক্ষণ ধরে মেয়েটার মাথায় হাত বুলিয়ে বুলিয়ে আদর করছিল। আচমকা মেয়েটার ব্রহ্মতালুর থেকে একটা চুল এক টানে তুলে নিল। মেয়েটা চীৎকার করে উঠল। ছেলেটা চুলটা পরম আদরে তার পিঠে ঝোলা ব্যাগটা সামনে এনে, চেন খুলে তার ভিতরে রেখে বলল, সোনা তুই কদ্দিন থাকবি না বল, এই থাকল আমার কাছে। তুই!
এই বলে সে পরম আদরে মেয়েটার দিকে তাকালো।
আমি একবার "সোনার" মুখের দিকে তাকালাম। সে দুটো হাতের পল্লব শাঁখের মত করে মুখটা ঢেকে আছে। চোখটা ছলছল। ব্যথায় না প্রেমে বুঝলাম না।
তারপর? তারপর আমি আমার কেশহীন মাথায় হাত বুলালাম। এ কেশহীন মস্তক দুর্ভাগ্য না সৌভাগ্য বোঝার চেষ্টা করলাম। এমন কেশোৎপাটি প্রেম ভালো না মন্দ বোঝার আগেই তারা নেমে গেল। আমি ভাবলাম সত্যিই প্রেম কি বিচিত্রপথগামী! জয়গুরু!