আজ যদি মৃণাল সেন বা ঋত্বিক ঘটক বেঁচে থাকতেন, হয় তো পরিযায়ী শ্রমিকদের মৃত্যুর কথা রূপালি পর্দায় উঠে আসত। অবশ্যই ফ্লপ হত সিনেমাটা। এই সিনেমাটা যেভাবে হল। কারণ এতে কোনো ঈশ্বরের বরপূত্র নায়কের "গ্র্যাণ্ড কামব্যাক" নেই। এতে কোনো ধর্মীয় বা রাজনৈতিক বা ঐতিহাসিক বিতর্ক নেই, যা নিয়ে মিডিয়া লিখবে। রোজ লিখবে। রোজ বিতর্ক হবে। আইন-আদালত যুদ্ধ হবে।
সিনেমাটা নিতান্ত পোকামাকড়ের মত মৃত, জীবিত পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে। শুধু তাই? সমাজের ঘুণের মত জাতপাতের বিদ্বেষ, সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ নিয়ে। নীতি বনাম আইন। ক্ষমতাবান বনাম দুর্বলের ন্যায়ের সংজ্ঞা নিয়ে। সিনেমাটা সাদা - কালো। তবে সিনেমার থেকে অনেক বড় কিছু।
গান নেই। আইটেম সং নেই। থ্রিল নেই। আছে কিছু প্রশ্ন, আর কিছু 'আনকম্ফোর্টেবল সত্য', মুহূর্ত। এই সিনেমাটাকে করমুক্ত করে দেওয়ার জন্য লড়াই হবে না। কেউ আবেদন করবে না।
একজন পুলিশ, একজন চিকিৎসক আর একজন সাংবাদিক - লকডাউন - করোনার অসহায়তার থেকে বড় অমানবিক ব্যবস্থার নির্যাতন... আর সমাজের নানা স্তর.... সমীকরণ... ভণ্ডামির উপর দাঁড়ানো সাম্যাবস্থা।
মৃণাল সেন নেই। সত্যজিৎ রায় নেই। ঋত্বিক ঘটক নেই। থাকলে আজ কি বানাতেন? ঋত্বিক ঘটক ব্যোমকেশ, সত্যজিৎ রায় ফেলুদা, আর মৃণাল সেন শবর? জানি না। এখন হাওয়া অন্যরকম। সিনেমাটা দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল আমার ভাষা কি আমাকে ঘুম পাড়াতে শেখাচ্ছে? যদি সিনেমাটা না দেখতাম, তবে? ইতিহাসের এতবড় যে একটা মোড় ঘুরে গেল, তার দলিল নিয়ে রূপালি পর্দায় কিছু কি থাকল আমার ভাষায়?
যাক সে কথা। পরিচালক ও প্রযোজক অনুভব সিনহা, রাজকুমার রাও, ভুমি পেণ্ডনেকর, পঙ্কজ কাপুর, আশুতোষ রাণা, দিয়া মির্জা, কৃতিকা কামরা.... অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ, এমন একটা সিনেমার জন্য। তাদের কথা বলার জন্য, যাদের কথা যা বলা হয়েছে তা এত সামান্য, যা বলা হয়নি তার তুলনায়, যে যাই পড়ি-দেখি মনে হয় অনেক কথা না বলা থেকে গেল.....
সিনেমাটা অসামান্য... খুব ভালো... কিচ্ছু বলার নেই.... শুধু বলব, কিছুক্ষণের জন্য শ্বাসপ্রশ্বাস, বুদ্ধিবিবেকের কাছে নিজেকে স্বচ্ছ লাগল.... মুখোমুখি লাগল...
ধন্য আপনারা.... অনেক অনেক সকৃতজ্ঞ অভিনন্দন.... এ গল্প বলতে পারার সাহসের জন্য.... ফ্লপ হবে জেনেও বানানোর সাহসের জন্য..... আর আপনারা বিশেষ করে অভিনেতারা, এত এত ওয়েবসিরিজের এত এত চাকচিক্য কাজের মধ্যেও সময় করে "এদের" জন্য কাজটা করার মত মনোভাব রাখার জন্য....কুর্ণিশ...