Skip to main content

 

চায়ের গন্ধ পেয়ে বুঝলেন সামনে চায়ের দোকান। স্ত্রীকে বললেন, বসব। কাঁধের উপর হাত রাখা অন্ধ মানুষটা তার স্বামী। জন্মান্ধ না। রোগে অন্ধ হয়েছে এই বছর দশেক।

মহিলা এক ঝলকে ভেবে দেখলেন টাকার ব্যাগটা এনেছেন কিনা। আনলেও তাতে খুচরো আছে কিনা। নাহলে চাওয়ালার সঙ্গে বচসা বাধবে। স্বামী মুখটা অপরাধীর মত করে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকবে। পুরোনো অভ্যাস, নইলে অন্ধ মানুষের আর এদিক ওদিক তাকানোতে কী এসে যায়?

দুজনে বেঞ্চে বসল। আরো অনেকে আছে। দুটো চিনি ছাড়া দুধ চা বলে মহিলা জিজ্ঞাসা করলেন, বিস্কুট খাবে?

এ প্রশ্নগুলো করতে অস্বস্তি হয়। বিস্কুট তো দেখতে পাচ্ছে না। কী কী আছে জানবে কী করে?

বললেন, খাব। বেকারি আছে?

দুটো বিস্কুট হাতে নিয়ে দুজনে বসে। সামনে একটা কুকুর এসে দাঁড়িয়ে। অন্ধ মানুষটার মুখের দিকে তাকিয়ে। ভদ্রমহিলা ভাবলেন, কোথায় পড়েছিলেন যারা কুকুর ভালোবাসে, তারা কুকুরদের চোখের দিকে তাকালে অক্সিটোসিন ক্ষরণ হয় মাথায়। সুখ হয়। উনি এক সময় কুকুর ভালোবাসতেন। ভদ্রমহিলা বললেন তোমার সামনে কুকুর এসেছে। লেজ নাড়ছে। সাদা রঙ। মাথার কাছটা কালো। বিস্কুট দেবে?

উনি বলার আগেই ছুঁড়েছেন। বিস্কুটটা কুকুরের চোখের কাছ ঘেঁষে বেরিয়ে মাটিতে পড়ল। একজন মহিলা বললেন, দেখে ছুঁড়তে পারেন না! আহা বেচারির যদি লাগত।

পাশ থেকে একজন ছোকরা বলল, বেচারা হবে দিদি…. একটু ঝুঁকুন। মহিলা বললেন, অসভ্য! ছোকরা বলল, কানা!

ভদ্রলোক উঠে দাঁড়িয়ে পড়লেন, হাতটা এগিয়ে। হাতটা রাখবেন কাঁধে। স্ত্রী টাকা মেটাচ্ছেন। কুকুরটা আরেকজনের সামনে লেজ নাড়ছে।

ভদ্রমহিলা ওঁর হাতটা নিজের হাতে নিয়ে বললেন, কী করবে? আরেকটু হাঁটবে, না ফিরব?

ভদ্রলোক কী একটা সিরিয়ালের কথা জিজ্ঞাসা করলেন। বললেন, আজ ওর পাকাদেখার দিন না?

ভদ্রমহিলা বললেন, বাব্বা, পারও। চলো। ফিরি।

দুজনে ফিরতে ফিরতে দাঁড়ালেন। দুপশলা বৃষ্টি পড়ল। ভদ্রলোক বললেন, দাঁড়িয়ে যাবে? বাড়বে?

ভদ্রমহিলা অন্ধকার আকাশের দিকে তাকিয়ে মেঘের ঘনত্ব বোঝার চেষ্টা করলেন। এত আলো বাজার জুড়ে.… ধাঁধা লাগছে চোখে… দেখাই যাচ্ছে না। দেখতে না পারার কী যে অস্বস্তি।

বললেন, তুমি আবার বৃষ্টি ভয় পেতে শুরু করলে কবে থেকে?

ভদ্রলোক বললেন, ভয় না। ছাতা আর আমায় সামলাবে কী করে?

ভদ্রমহিলা বললেন, হবেখন। ধীরে চলো।

ভদ্রলোক বললেন, টোটো নেবে?

ভদ্রমহিলা বিরক্তির সঙ্গে বললেন, না।

ওঁর হাঁটায় আশ্বাস এলো। বললেন, চলো।