Skip to main content

সুনীলবাবুর "অস্তিত্ব, স্বাধীনতা ও দ্বিধা" প্রবন্ধে লেখা এই কথাগুলো তুলে দিলাম।
      এ যেন কাম্যুর 'দ্য মিথ অব সিসিফাস', দস্তোয়েভস্কির 'নোটস ফ্রম দ্য আন্ডারগ্রাউন্ড' আর সার্ত্রের 'নসিয়া', নীৎজের 'দাস স্পোক জরাথ্রুষ্ট' - এই চৌমাথায় দাঁড়িয়ে একটা সিগারেট হাতে নিয়ে যেন স্বভঙ্গীমায় কথাগুলো বলে চলেছেন....বাকিটা পাঠক বুঝে নেবেন, সে অ্যাবসার্ডজিম, নিহিলিজম, এক্সিস্টেনসিয়ালিজম ইত্যাদি কি নেবে।
      এইভাবে ভাবানোর, বলার মানুষ আজ আমাদের বাংলায় কই?

"বহু স্তর পেরিয়ে মানুষের চৈতন্য এখন চরম স্বাধীনতার স্তরে এসে পৌঁছেছে - যখন সব কিছুকেই সে সন্দেহ ও অবিশ্বাস করতে শুরু করেছে। ফরাসী দেশে অবরোধের সময়েই যেমন ফরাসী চৈতন্য সবচেয়ে স্বাধীন ছিল - আমাদের এই বর্তমান সন্দেহ ও অবিশ্বাসের জগতেও তেমনি স্বাধীনতা। কিন্তু এই অস্বীকার ও নাস্তির জগত বড় শীতল নির্মম, বড় কষ্টকর। এ সংসারে মানুষ সমস্ত দায়িত্ব এড়াবার চেষ্টা করলেও - নিজের কাছে দায়িত্ব এড়াতে পারে না - সে দায়িত্ব হচ্ছে জীবনের একটা উদ্দেশ্য খুঁজে পাওয়া। শুধু উদ্দেশ্য নয়, জীবনের একটা সত্য, মানুষের মানুষ হিসাবে বেঁচে থাকার যে ভিত্তি - যার নাম মনুষ্যত্ব, তার একটা উৎস। এটা খুঁজে না পেলে সে ছটফট করে
আবু সয়ীদ আয়ুব বলেছেন তিনিও ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন না- কিন্তু জীবনের একটা সামগ্রিক পূর্ণতায় তিনি বিশ্বাসী - ধ্বংস বা ঘৃণার বদলে কল্যাণের পথই সেই পূর্ণতার দিকে নিয়ে যায়, কিন্তু এই পূর্ণতার ধারণাও ঈশ্বর বিশ্বাসের মতনই একটা বিশ্বাস। সমস্ত প্রশ্ন বন্ধ রেখে একরকম সমর্পণ। স্বাধীন চৈতন্য একে স্বীকার করে নিতে পারবে না সহজে। বস্তুত আমাদের দেশে এখন যেটা প্রয়োজন - তা এই ধরণের কোনো বিশ্বাসের কাছে আত্মসমর্পণ নয়, প্রাচীন ঐতিহ্যে নিদর্শন বারবার একঘেয়ে ভাবে তুলে ধরা তো নয়ই! প্রয়োজন এই অবিশ্বাস ও নাস্তির জগতে জীবনের একটা যুক্তিসিদ্ধ উদ্দেশ্য খুঁজে বার করা। সেই উদ্দেশ্য খুঁজে না পেলে জীবনটা যদি নিছক অর্থহীন মনে হয় - তখনই এই জীবনটাকে নিজ হাতে ধ্বংস করার ইচ্ছে জাগাও খুব অসম্ভব নয়। প্রতিষ্ঠিত বিশ্বাসগুলি অস্বীকার করার পর তাদের আবেদন সত্যিই নষ্ট হয়ে গেছে, ফলে মানুষের ভিত্তিমূল সরে গেছে, মানুষের কোনো আশ্রয় কোনো ভবিষ্যৎ নেই, এক সর্বব্যাপী শূন্যতা শুধু চৈতন্য জুড়ে আছে। এখন দুটো পথ খোলা - এই শূন্যতার কাছেই আত্মসমর্পণ - যার একদিকের রূপ, জড়ত্ব ও নির্বেদ, অথবা আত্মধ্বংসী শক্তিকে বাধা না দেওয়া - অন্যদিকে জীবনের একটা উদ্দেশ্য খুঁজে নিয়ে এই শূন্যতা থেকে বেরিয়ে আসা। আমরা এখন আছি এই সন্ধিক্ষণে, আমাদের মধ্যে এখন দ্বিধা - আমরা কোন পথ বেছে নেব। বলাইবাহুল্য, জড়ত্ব কিম্বা আত্মধ্বংসই সহজ বলে সেই দিকেই অনেকের ঝোঁক ইতিমধ্যেই দেখা যাচ্ছে - কিন্তু অন্যদিকেও অনুসন্ধান বন্ধ হয়নি - এটা আশা করাই সঙ্গত।"