তবু জীবিতের মত ভাবি
কেন কথায় কথায় এত মৃত ব্যক্তিদের প্রসঙ্গ
কেন বারবার কবর খোঁড়া, চিতার ভস্ম হাতড়ানো
আমি তুমি দু'জনেই তো বেঁচে আছি এখনও
এসো না কথা বলি, না হয় দ্বিমত হই
তবু জীবিতের মত ভাবি!
হাঁটছি
দুঃখ আমার সমবয়েসি নয়
আনন্দ আমার সমবয়েসি নয়
ভালোবাসা আমার সমবয়েসি নয়
ঘৃণা আমার সমবয়েসি নয়
এ আকাশ, মাটি, জল, বাতাস, আলো
এরা কেউই আমার সমবয়েসি নয়
এ গ্রহ, তারা, নক্ষত্র, ধূমকেতু
এরাও নয় আমার সমবয়েসি
ইচ্ছা মানে শর্ত নয়
পাশাপাশি দুজন মানুষ হেঁটে গেলে ভাবতাম
বন্ধু, কিম্বা দম্পতি, কিম্বা..
এখন জানি
একে অন্যের শর্তও হতে পারে
চাহিয়া দেখো রসের স্রোতে রঙের খেলাখানি
গতকাল মধ্যরাত থেকে যে শুভেচ্ছা আর ভালোবাসার স্রোতে ভেসে চলেছি, তার জন্য নিজে কতটা যোগ্য সত্যিই জানি না। নীরেন্দ্রনাথ মহাশয় একবার বলেছিলেন, জীবনে এমন অনেক অপমান দুঃখ পেয়েছি যা হয়ত কাম্য ছিল না, কিন্তু অন্যদিকে এমন অনেক সুখ, ভালোবাসা পেয়েছি, তারও আমি যোগ্য ছিলাম
অযত্নে, অসুন্দরেও কিছুটা জীবন রেখেছি
...
আত্মদীপ
অবশেষে তোমার কান্না তোমাকেই কেঁদে নিতে হবে
অবশেষে তোমার ধর্ম তোমাকেই খুঁজে নিতে হবে
অবশেষে তোমার সাথে তোমার ভিতরে
তোমাকেই ঘর বাঁধতে হবে
যত ছায়া পড়ে
...
যানজট
...
কিছু কিছু প্রাপ্তির পর চুপ হয়ে যাই
কিছু কিছু প্রাপ্তির পর চুপ হয়ে যাই। কৃতজ্ঞতায়। এর যোগ্য কিনা সে প্রশ্ন করতেও সঙ্কোচ হয়।
সুস্মিতার আঁকা এই ছবিটার ক্ষেত্রে আরো মুগ্ধ হলাম ওনার সৃষ্টির নিপুণতায়, আন্তরিকতায়। অভিভূত হলাম। এতটা দূর আমার বাড়ি এসে নিজের হাতে ছবিটা দিলেন, এও বড় কম প্রাপ্তি নয়। জানি না কি বলে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করি। প্রার্থনা করি সুস্থ থাকুন, আনন্দে থাকুন, এমনই সৃষ্টিমগ্ন থাকুন।
JACK PREGER
আমি এই মহাপ্রাণের সম্বন্ধে জ্ঞাত হই অনন্যার কাছ থেকে। সেদিন শ্রদ্ধায় মাথা নীচু হয়ে এসেছিল। ভারাক্রান্তও হয়েছিলাম এই ভেবে যে এমন মানুষদের কথা আমরা এত কম জানি কেন? আমাদের মিডিয়া এত উদাসীন কেন?
পুরুষের উর্বশী বাসনা
আমার ভীষণ ভয় করল
ঘাটও চেয়েছিলে শ্যাওলাহীন
খেলার সাথী
ঘরের সব ক'টা দরজা বাজারে, লোকের ভিড়ে না খুলুক
কোনো একটা রাস্তা থাকুক নিরুদ্দেশের বালাই নিয়ে,
অদরকারি, খোলামকুচি, অনাদরের নুড়ি-পাথর
সে দরজার বাইরে অপেক্ষা করুক আমার জন্য,
ওরা বড় আপনার আমার
এক কোপে নাশে
নিদ্রামগ্ন তীর্থযাত্রীগণ
নিদ্রাহারা তারকামালা রহিয়াছে চাহি, যেন সশস্ত্র প্রহরী ওরা
বিস্তীর্ণ মরুভূমি মাঝে,
এখনও গুনতি চলছে
ঈশ্বর, আপনার মাথায় যত না শপথের বোঝা
তার চাইতে লক্ষগুণ বেশি ভাঙা শপথের ভার
আপনি একটু জিরিয়ে নিন ঈশ্বর
এখনও গুনতি চলছে
কবিতাতে যুক্তি নেই
...
প্রতিশব্দ আছে, শব্দ নেই
আমার বসার ঘরে শোয়ার ঘরে ফ্যানের গায়ে, টিভির গায়ে, কম্পিউটারের গায়ে, বইয়ের মলাটে প্রকাশকের নামে, ক্যালেণ্ডারে, আলমারির চাবির সংখ্যায়, এমনকি ঠাকুর ঘরের ধূপের প্যাকেটে ইংরাজি অক্ষরমালা ছড়িয়ে। কারণ আমি একজন বহুভাষিক, উন্মুক্ত বাজারি সভ্যতার নাগরিক।
...
ভারত তুমি কার?
বিহারের ভূমিকম্পের জন্যে একবার গান্ধীজী বিহারের মানুষের অস্পৃশ্যতা প্রথাকে দায়ী করেন। বলেন অস্পৃশ্যতার মত এক অমানবিক প্রথাকে মেনে চলায় ঈশ্বর ক্রুদ্ধ, তাই এই ভূমিকম্প।
সত্য
যে চলতে চলতে দাঁড়িয়ে পড়ে
দাঁড়িয়ে পড়ে পিছন ঘুরে
সবার চলা আড়াল করে,
বলে ওঠে গম্ভীর স্বরে -
'ইহাই সত্য'
তাকে আমি এড়িয়ে চলি
কোফি আন্নান
কোনো কবিতাই
আসলে তো একটাও কবিতা পুরো লেখা হয়নি আজ অবধি
একটা স্লেট হাতে
জঙ্গলে, গাছের ডালে, গুহায় যে মানুষটা নগ্ন হয়ে
বা কখনও ছাল-বাকলা গায়ে
বাদামগুলোর মত
মন্দিরের গায়ে গায়ে অনেক গর্ত
পায়রা, মাকড়সা, পিঁপড়ের জমায়েত
মানত করা লাল কাপড়, সিঁদুরের খালি ডিব্বা, ভাঙা চিরুনি
এরকম অনেক কিছু থেকে যায়
ভাঙা, ফেলে দেওয়া, অবহেলার সংসার গড়ে ওঠে অলক্ষ্যে
একদিন কারোর শুচিবায়ু চোখে পড়ে
অবহেলার সংসার আবর্জনা হয়ে যায় নিমেষেই
আমি যেখানে
আমি যেখানে নির্ভাষ
আমি যেখানে অন্তরিন নগ্ন
আমি যেখানে মহাকাশের কালহীন আবর্ত
আমি যেখানে গভীর জঙ্গলে ফোটা কোনো অখ্যাত ফুলের সহচর
আমি যেখানে বিস্তীর্ণ মরুভূমির একটি নির্বিশেষ বালুকণা
অটো ইম্যুউন
রুচির বৈষম্যতা আর রুচির মান এক কথা কি? খাদ্যে রুচির পার্থক্য হয়েই থাকে। টক, ঝাল, মিষ্টি, অম্ল ইত্যাদি নানা স্বাদের বৈষম্য থাকে। তাতে কারো কোনো ক্ষতি হয়েছে বলে কোনো তথ্য কোথাও লিপিবদ্ধও নেই। কিন্তু খাদ্য-অখাদ্যের বিচার যখন আসে তখন যদি কেউ সেই বিচারের ক্ষেত্রকে রুচির বিচারের ক্ষেত্রর মধ্যে নিয়ে আসে? অখাদ্যকে রুচির তারতম্য বলে চালাতে চায়?
অকারণ
আজ পূর্ণিমা না
তবু আধফালি চাঁদই যেন সারা আকাশ জুড়ে
ঢেউয়ের পাড় ভাঙার শব্দ শুনেছি
গভীর রাতে পুরীর বিচে বসে
প্রবঞ্চক
...
আজ অন্তত
তোমার ঝুড়িতে সাজানো
শেষ গোলাপি কুঁড়িটা আমায় দিয়ো
ওরা শিশিরে ভেজা নয়, জানি
চাঁপাকলের জলে ভেজানো।
ভূগর্ভস্থ জলে সিক্ত
ওদের কোমল শেষ শরীরটা বেচো না,
আমায় দিয়ো
আমি ফুল ফুটিয়ে তোমার হাতে দেব।
কিছু ঘটলে বা ঘটব ঘটব করলে সবাই বলেন উদ্বিগ্ন না হতে
তুমি থাকবে না
একদা এক কালে সামগান ছিল। একদা এক কালে মৈত্রী-করুণা-নির্বাণ ছিল। একদা এক কালে আজান ছিল। একদা কালে ওয়াহে গুরু ছিল।
একদিন মাটি ভেঙেছিল। একদিন নদী ভেঙেছিল। একদিন হৃদয় ভেঙেছিল। একদিন বিশ্বাস ভেঙেছিল। একদিন মানুষ ভেঙেছিল।
...
'ওরা কাজ করে'র স্রোত!
কয়েকটা এলেবেলে গান - চলচ্চিত্র
সাধ বনাম সুবিধা
ডারউইন মহাশয়ের মতে সংগ্রামই হল টিকে থাকার মোদ্দা কথা। কিসের জন্য সংগ্রাম? না অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম। আমাদের কিসের জন্য সংগ্রাম? না সুবিধার জন্য। সবার থেকে বেশি সুবিধার মধ্যে আমি বাঁচতে চাই। যে 'বেশি সুবিধা'র কোনো নির্দিষ্ট পরিমাপ নেই, থামার জায়গা নেই।
দোকানির সাজানো লাটাই
দোকানির সাজানো লাটাই, মাঞ্জা দেওয়া সুতো, ঘুড়ি - ছ'বছরের চোখটায় টাটাচ্ছিল।
মা বললে, এখন থাক
(নীরবতা বলল, এখন পারব না)
ছেলেটা বলল, কিন্তু আমাদের ছাদে যে খুব হাওয়া!
(চঞ্চলতা বলল, এ সব যে আমারই জন্য রাখা!)
টাকাটা কি আব্বুকে দেব?
ফরজানা আকাশের দিকে তাকিয়ে, মস্তবড় একখানা মাঠের মাঝখানে শুয়ে। চোখদুটো আকাশের দিকে খোলা। সকাল থেকে বুকে ব্যথা হচ্ছিল। স্কুলেও গিয়েছিল, ফিরে এসেছে। স্যারেরা বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন। বাড়ি এসে বমি হল। মা বলল, সকালের নামাজে কিছু ভুলচুক করেছিস। বাবা বলল, আল্লাহ্র মেহেরবানিতে সব ঠিক হয়ে যাবে।
জীবন সত্যের থেকে কিছুটা বেশি
জীবন সত্যের থেকে কিছুটা বেশি
তা বলে সে মিথ্যা নয়
শুধু সত্যের থেকে কিছুটা বেশি
বাঁশিওয়ালা
খোঁজ থাকে। কিসের খোঁজ বুঝি না। মানুষের যে ঈশ্বরের খোঁজ, সেই ঈশ্বরের কথা কত বইতে কত ভাবে। কত আবেগ, কত নীতি, কত বর্ণনা, তার কোনো শেষ নেই। মোদ্দা কথা মানুষের নিজের ভিতর নিজেকে নিয়ে একটা বোঝাপড়ার যেন আর শেষ নেই। যেই তুমি মনে করেছ একটা জায়গায় এসে পৌঁছেছ, অমনি এমন একটা ঢেউ এলো যে সব এলোমেলো হয়ে গেল। তুমি যা যা ভেবে রেখেছিলে সব গেল গুলিয়ে। কিচ্ছু নিজের ম
স্বপ্নরা বড় হিসেবি আজকাল
প্রচণ্ড রেগে থাকা এক ঝাঁক পাখি
ভোরের আলোকে ক্ষত-বিক্ষত করছে খাঁচার ভিতর থেকে
ঘুম ভাঙল সেই চীৎকারে
মনে হল এরকম চীৎকার শুনিনি তো বহুদিন
এত প্রতিবাদ!
আমি ফিরব
ঘড়ির কাঁটার আবর্ত বদ্ধ সময়
আকাশ চরা পরিযায়ী মেঘ
বকের ডানার নিঃশব্দ আন্দোলন
সময়, আলিঙ্গন খোলো
আমি ফিরব
তুমি কি বার্তা পাঠিয়েছিলে
যতবার তোমার সামনে এসে দাঁড়াতে চেয়েছি
যতবার তোমার সামনে এসে দাঁড়াতে চেয়েছি
তোমার মুখের দিকে তাকিয়েছি,
বলেছ, নিজেকে নিয়ে এসো
জিজ্ঞাসা করেছি, আমি কোথায়?
বলেছ, যেখানে তোমার সহজ আনন্দ, সেথায়
গীতবিতানের যেমন শেষপাতা নেই
...
এরা কোন দেশের ঠাকুমা?
পাখিটা ডাকতেই ছেলেটা ঘরের বাইরে এসে দাঁড়ালো। এক হাতে একটা আধ খাওয়া পেয়ারা। ছুঁড়ে ফেলে দিল পুকুরের জলে। ধুপ্ করে আওয়াজ করে, একটা গোল চাকতি ঢেউ তুলে পেয়ারাটা ডুবে গেল। পুকুরের জলে ভাসা নারকেল গাছের ছায়াগুলো উড়ন্ত কাপড়ের মত দুলে উঠল। ছেলেটা ভালো করে খেয়াল করল দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। দাঁতের ফাঁকে একটা বিচ
মৃত অপলক চোখে
জানলাটা বহু পুরোনো ডিজাইনের, এরকম লোহার কাজ এখন খুব একটা দেখা যায় না। তিনটে হাঁস জলে ভাসছে। লোহার ঢেউ, লোহার হাঁস। আমি যখন ছোটো ছিলাম, আমার মনে হত আমারও এরকম একটা হাঁসওয়ালা জানলা থাকবে। পরে অবশ্য সে ইচ্ছাও থাকল না, আর ডিজাইনটাও সেকেলে হয়ে গেল।
ডালপালা
দিন গড়িয়ে বিকাল হল। সন্ধ্যা হব হব। সন্ধ্যার আকাশে ঘরে ফেরা পাখির ঢল, তা দেখতে দেখতে বিভোর হলাম। পাখির সংখ্যা গুনতে গিয়ে আঙুলের কড় হারালাম। গতিপথ বুঝতে দিক হারালাম। হঠাৎ মনে এলো ডালপালার আড়ালের পাখিটার কথা। পাখিটা কি উড়ে গেছে? ওই ঘরে ফেরা পাখিদের মধ্যে কি ছিল ও? ডালপালা সরিয়ে দেখতে ভয়, অপেক্ষায় উদ্বিগ্নতা এখন।
...
খাদ থেকে বাঁচাতে না পারলে, যে নিজেও খাদে পড়ার জন্য প্রস্তুত, সে-ই বন্ধু
খাদ থেকে বাঁচাতে না পারলে, যে নিজেও খাদে পড়ার জন্য প্রস্তুত, সে-ই বন্ধু।
আর বাদবাকি যারা বন্ধুর মত, চৌমাথায় ট্রাফিক সিগন্যালে একসাথে আছি আটকে, সিগন্যাল সবুজ হওয়ার অপেক্ষায়, মনে মনে। সিগন্যাল পেলে কে কোনদিকে যাব কে জানে?!
নির্বাসিত
মস্তিষ্ক থেকে দূরে থাকতে চাইছি খানিকক্ষণ
বুকের পাঁজরের উপর
শামুকের মত গুটিয়ে শুয়ে থাকতে চাইছি
ওরা কারা?
তুমি নিশ্চুপ
আমিও
ওরা কারা,
যাদের কণ্ঠস্বরে অবয়বহীন অনৈতিহাসিক সত্য?
তুমি বিভ্রান্ত
আমিও
ওরা কারা,
যাদের সবকটা পথে সুনির্দিষ্ট অশ্বমেধের অশ্ব?
তুমি বালিঘড়ি, উপরপক্ষ
আমি তো বালি শূন্য
ওরা কারা,
যাদের ঘড়ি সময়ের না, রাজ অঙ্গুলি ভক্ত?
আবার সেই ভুল
আবার সেই ভুল!
একই ভুল
ইতিহাস তুমি ক্লান্ত হও না,
একই ছবি বারবার দেখতে দেখতে?
ঝরণার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত
একটা নদীর সম্ভাবনা থাকে
তাকে বাধা দিলে সাগরের অভিশাপ লাগে
কেন বারবার ভুলে যাও